ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস : গৌরবের ৯৬ বছর। লজ্জার?
বাপ্পী রহমান
প্রাচ্যের বাতিঘর হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। একশ বছর ছুঁই ছুঁই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ যুগের সাক্ষী। যৌবনকালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০’র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-শিক্ষকদের আত্মত্যাগ ও বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। সর্বশেষ ২০০৭ সালে ১/১১ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়।
পাল্টে গেছে সেইসব চিত্র! ঠিক এক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মারকগ্রন্থে জিয়াউর রহমান হলের বর্ণনায় লেখা হয়েছিল, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। স্মারকগ্রন্থের ১৯ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘স্মৃতি অম্লান’ শিরোনামে লেখা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর বিবরণীর জিয়াউর রহমান হলের অংশে লেখা হয়, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া স্মারকগ্রন্থের ১৩নং পৃষ্ঠায় জগন্নাথ হলের বর্ণনায় লেখা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু তথা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সম্প্রদায় এবং উপজাতি ছাত্রদের জন্য এই হল প্রতিষ্ঠিত। এটি লিখেছিলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান। জাতির জনকের প্রতি তার বিদ্বেষের প্রমাণ রেখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পরিচিতি প্রদানের মাধ্যমে। রেজাউর লিখেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা যিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশের জাতির জনক হিসেবে বিবেচিত।’
শুধু তাই নয়! ৫০তম সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পাতায় যে শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সমালোচনার মধ্যে তাতে কয়েকবার পরিবর্তন আনা হয়। সরানো হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম, যে নামটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে দেওয়া হয়েছিল।
রেজাউরের জামায়াতপ্রীতির কথা সর্বজনবিদিত। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ রেজাউরকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেন। ২০০৯ সালে বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পরও তিনি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে বহাল তবিয়তে ছিলেন। আন্দোলনের মুখে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল রেজাউরকে। আর এটি একটি ‘আই ওয়াশ’ তা বুঝতে বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন নেই।
কিন্তু দিন শেষে প্রশ্ন জাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি পারবে? মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারী ও স্বাধীনতার প্রতি চরম বিদ্বেষী রেজাউরকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও চাকরিতে বহাল রয়েছেন। অথচ আইনের হাতে সোপর্দ করা হলো না তাকে। ঘটনা তদন্তে সিন্ডিকেট যে কমিটি গঠন করেছিল, ঘটনার এক বছর হলেও এখনো কার্যত শুরু করেনি তারা। এগুলো কিসের ইঙ্গিত বহন করে? নাকি শর্ষের ভেতরই লুকিয়ে আছে ভূত? এটা তো সত্য, শর্ষের ভেতর ভূত থাকলে তা দিয়ে ভূত তাড়ানো শুধু অসম্ভবই নয়, হাস্যকরও বটে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা