জঙ্গি হামলা বাংলাদেশকে আরও শক্তিশালী করেছে
মে. জে. (অব.) আব্দুর রশীদ
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা বাংলাদেশের জন্য একটি আই ওপেনার ছিল। সন্ত্রাসবাদ দেশের কতটুকু ক্ষতি বা নিরীহ মানুষকে কীভাবে মারতে পারে, সে ঝুঁকি সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা ছিল সেটি ছিল তাত্ত্বিক। এ ধরনের হামলা মোকাবিলায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা দেশের সরকারের এটি প্রথম অভিজ্ঞতা। যদিও এর আগে বেশ কয়েকবার দেশে জঙ্গি হামলা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের হামলা হতে দেখেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। সেখানে ছিল একটি মিক্সড টাইপ অফ অ্যাটাক। আর এটি হলো পিওর জঙ্গি টাইপ অ্যাটাক। আমরা দেখেছি, গুলশানে হামলা হওয়ার পরে আমাদের সবাইকে একটা ধাক্কা দিয়েছে। এই ধাক্কা দেওয়ার ফলে রাজনৈতিক মহল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সামাজিক সংগঠন এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবাই সতর্ক হয়েছে। যার ফলে আমরা মানববন্ধনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছি। স্কুল-কলেজের যারা পরিচালনা পরিষদ আছেন তারা জঙ্গিবাদের বিপদ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন।
মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছিল কীভাবে তাদের সন্তানেরা এই জঙ্গি মতবাদে আসতে সক্ষম হচ্ছে। বিশেষ করে সন্তানদের যখন কোনো একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াতে দিচ্ছি। সেসব বিষয় মিলিয়ে যে ঝুঁকিটা তাৎক্ষণিক ছিল। সেটি হলো যারা সুইসাইডাল টাইপ জঙ্গি বা মিলিটাইন্ড করেছে এবং অস্ত্র হাতে নিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে নিরীহ মানুষকে ক্ষুণœ করার প্রস্তুত হামলা তাদের দমন করা।
বাংলাদেশ খুব সক্ষমভাবেই সেই চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করেছে। গুলশানে জঙ্গি হামলায় আমরা দেখেছি, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চিহ্নিত জঙ্গিরা মারা গিয়েছে আবার অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। এমনকি তাদের যে ঘাঁটি বা আস্তানাগুলো ছিল পুলিশি অভিযানের মাধ্যমে সেগুলোকে নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে মিলিটেন্ড টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশনগুলোর আক্রমণ করার ক্ষমতা খর্ব হয়েছে। তাতে যেমন নিরাপত্তা অনেক নিরাপদ হয়েছে তেমনি জনমনে স্বস্তি এসেছে।
অরেকটি বিষয় হলো, জঙ্গিবাদের মতাদর্শ থেকে জঙ্গি তৈরি হয়। সেই মতাদর্শ আমাদের সমাজে কতটুকু প্রসারিত হচ্ছে। জঙ্গিবাদের সহিষ্ণু মতাদর্শ যদি আমাদের সমাজে থাকে তাহলে সেখান থেকে জঙ্গি তৈরি হবেই। এখন এটি হবে বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বড় চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলার জন্য যে সমন্বিত কৌশল, সেটি আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্কাস্টেটেড হয়েছে। আরও বেশি সমন্বিত হয়েছে। পুলিশের ডেডিকেটেড ফোর্স জঙ্গিবাদকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছে। বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তারাও জঙ্গিবাদের মতাদর্শের বিরুদ্ধে লড়ছে। আমরা এক লাখ আলেম-ওলামার ফতোয়া দেখেছি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। আমরা মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের প্রশিক্ষণ দিতে দেখেছি। যাতে করে এই মতাদর্শ ছড়িয়ে না পড়ে। কারণ বাংলাদেশের এই ধরনের ঝুঁকি আছে। এই মতাদর্শটা জিহাদের ইসলাম ব্যাজ এবং সুন্নি ইসলাম ব্যাজ। বাংলাদেশ যেহেতু মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। স্বভাবতই আমাদের ভেতরে এই ইন্সপায়রেশনটা থাকবে সেটিই স্বাভাবিক। সে সক্রিয়তা থেকে একটি টলারেন্স বা সহিষ্ণু সমাজ কীভাবে তৈরি করা যায় সেটি হবে বাংলাদেশের জন্য আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের পেছনে অতীতের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লক্ষ্য করেছি। জঙ্গিবাদের পেছনে যদি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ভবিষ্যতে কখনও আসে, তখন স্বভাবতই যারা পৃষ্ঠপোষকতা করবেন তারা বাংলাদেশকে আরও বেশি অনিরাপদ করবে। বিশেষ করে পাকিস্তানের মতো আমাদের সোনার দেশকে অনিরাপদ করবে। একটি সহিষ্ণু সমাজ বা একটি সেক্যুলার সমাজ গঠনের জন্যে হিংসা মতাদর্শকে দূরে রাখতে হবে। আমাদের সামাজিক এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরুদ্ধে মতাদর্শ দিয়ে লড়াই সেটিই হবে আমাদের আগামী দিনগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
পরিচিতি: নিরাপত্তা বিশ্লেষক
মতামতহ গ্রহণ: সাগর গনি