জঙ্গি মোকাবিলার ব্যাপারে সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে তাতে আশা করা যাচ্ছে আগামীতে এরকম আক্রমণ করতে পারবে না
ওয়ালিউর রাহমান: গুলশানের হলি আর্র্টিজানে হামলার ঘটনায় সোয়াত বাহিনীর স্বল্পতার কারণে বোধহয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেদিনের ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারছিল না। এই কারণে পুলিশের দুজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে জীবন দিতে হয়েছিল। ততক্ষণে এক ঘণ্টার মধ্যে জঙ্গিরা সেখানে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন দেশি-বিদেশিকে হত্যা করতে সমর্থ হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে জঙ্গিরা অবশ্যই আইটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। হামলায় অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশি মুজাহিদিন এবং হিযবুত তাহ্রীর সংগঠনেরÑ এটা আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শনাক্ত করেছিল। তাদের টিম লিডার কানাডা অধিবাসী ছিলেন। তিনি কানাডা থেকে সিরিয়া ও ইস্তাম্বুল হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন।
জঙ্গিদের যে শক্তিশালী নেটওয়ার্কÑ সেই তুলনায় আমাদের পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিরক্ষামূলক সংস্থার সংখ্যা অনেক কম। সেদিন আমাদের সেনাবাহিনীর কমান্ডো বাহিনীকে একটু দেরি করে আনা হলো। যদি সঙ্গে সঙ্গে আনা যেত তাহলে মনে হয় আমরা অনেককে বাঁচাতে পারতাম। ওখানে যারা ছিল তাদেরকে তো জঙ্গিরা মেরেছে এবং অনেক জঙ্গি আত্মঘাতী হামলার পথ বেছে নিয়েছিল। যেসব জঙ্গিরা জীবিত ছিল কমান্ডো বাহিনী তাদেরকে হত্যা করল। এরকম একটা আঘাত বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো হয়েছে। এদের জন্য আমরা ২০ জনসহ অনেক বিদেশি নাগরিককে হারিয়েছি।
জঙ্গিরা সমাজের অতি পরিচিত জায়গায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করে। এর প্রধান কারণ হলো তাদের প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি পাওয়ার একটা সুযোগ কাজ করে। আস্তে আস্তে তাদের এই কার্যক্রমের জন্য তারা অনেক বিস্তৃত হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে হলি আর্টিজান বেকারিতে এ রকম একটা হামলা হলো। বিচ্ছিন্ন ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে ঢাকা শহরের আশপাশে বিভিন্ন জায়গায় থেকে ধরা হচ্ছে। এরকম আক্রমণের জন্য কি আমরা তৈরি ছিলাম? সরকার থেকে কোনো ঘাটতি ছিল না। যন্ত্রপাতি, অস্ত্র-সস্ত্র সবই ছিল।
আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এরইমধ্যে আমেরিকা, ইংল্যান্ড এবং ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়েছে বা নিচ্ছে। হলি আর্টিজানের হামলার পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিদের বিভিন্ন আস্তানায় আক্রমণ চালিয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ সেখানে সফলতার সঙ্গে সেগুলো মোকাবিলা করেছে।
এ ধরনের হামলার পর সবচেয়ে আমরা বড় সাহায্য পেয়েছি কমিউনিটি থেকে। যদি এটা না পেতাম, তাহলে এত সফলতা অর্জন করতে পারতাম না। মিরপুরে যে ক্যাম্পে জঙ্গিরা অবস্থান করেছিল, সেখানে পুলিশকে খবর দিয়েছিল একটা চায়ের দোকানদার। ইউরোপ, আমেরিকা, ভারত এমনকি বাংলাদেশে সব জায়গায় সাহায্য করেছে এই সাধারণ মানুষ। এই সাপোর্ট না পেলে জঙ্গি আক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হতো না।
আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবেÑ হিযবুত তাহ্্রীর ও মুজাহিদ এদেরকে নিষিদ্ধ হয়েছে। পাশাপাশি এদের সঙ্গে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপÑ যারা সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত তারা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আজ এই জঙ্গি কার্যক্রমÑ সেটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, ইংল্যান্ড ও প্যারিসসহ ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশেও জঙ্গি তৎপরতা বিদ্যমান। তারা আইটি প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন দেশে হত্যাকা- চালিয়ে আসছে। আমাদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীকেও সতর্ক থাকতে হবে। এ বিষয়ে আরো প্রশিক্ষণ নিতে হবে যেন সহজেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়।
পরিচিতি : রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ : ফাতেমা-তুজ-জোহরা
সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী