রাগ করা ভালো নয়
মাহফুজ আল মাদানী
রাগ। মানুষের যে সকল মন্দ স্বভাব বা দোষ রয়েছে তার মধ্যে রাগ অন্যতম। মানুষ বলতেই কম-বেশি রাগের অধিকারী। রাগ নেই এমন মানুষ পাওয়া দুস্কর। তাই বলে কি রাগের কারণে নিজের জীবনকে ধ্বংসের দিকে বা অন্যকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দেব। না, তা হতে পারে না। তাই ইসলাম ধর্ম ব্যক্তির রাগকে সমর্থন করে না। তবে যদি রাগ উঠেই যায় তাহলে তার করণীয় বিষয় নিয়ে ইসলাম ধর্ম বিহীত ব্যবস্থা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে।
রাগ না করতে ইসলাম ধর্ম সর্বদা নিরুৎসাহিত করেছে। রাগ মানুষের হিতাহিত জ্ঞানকে ধ্বংস করে। তাই আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাগ করতে নিষেধ করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, একদা জনৈক ব্যক্তি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আরজ করলেন, আমাকে কিছু উপদেশ দিন, তিনি এরশাদ করলেন, তুমি রাগ করবে না। লোকটি কয়েকবার একই কথা বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও প্রত্যেকবার বললেন, তুমি রাগ করবে না’ -(বোখারী)। অত্র হাদিসের আলোকে বোধগম্য হচ্ছে যে, ইসলাম রাগ করাকে পছন্দ করে না। তাই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাগ না করতে হাদিসের মধ্যে নিষেধ করেছেন। রাগ মানুষের কু-রিপুগুলোর মধ্যে অন্যতম। যা মানুষকে ধ্বংসের শেষ সীমায় পৌঁছিয়ে দেয়। রাগ বা ক্রোধের অনেক অপকারী দিক রয়েছে। ক্রোধের এই ক্ষতিকর দিকগুলো মানুষকে করে দেয় এমন এক পর্যায়ে যখন তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। ফলে ভাল, মন্দ, ন্যায়, অন্যায় বিবেচনা করা সুযোগ পায় না। যার ফলশ্রুতিতে তার দ্বারা যেকোনো ধ্বংসাত্মক এবং অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে পারে। রাগ মানুষের মানবীয় মূল্যবোধ ধ্বংস করে দেয়। রাগের কারণে মানুষ তার কর্মের সুপরিণতি লাভ করতে পারে না। ক্রোধের কারণে মানুষ অনেক সময় সীমা অতিক্রম করে, এমনকি কখনো শরিয়ত পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। রাগের কারণে আদর্শবান মানুষও আদর্শচ্যুত হয়ে অনেক গর্হিত কাজ করে ফেলে। সর্বোপরি রাগ মানুষের ইমান নষ্ট করে দেয়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘ক্রোধ ইমানকে এমনিভাবে নষ্ট করে দেয়, যেমনিভাবে পিপুল গাছের রস মধু নষ্ট করে দেয়’। আমরা যদি আমাদের রাগকে দমন করতে না পারি তাহলে আমাদের ইমানকে সর্বদা পরিপক্ক রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই রাগকে প্রশ্রয় নয়, সংবরণ করতে হবে সবসময়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাগ দমনের জন্য বিভিন্ন উপায় বর্ণনা করে গেছেন। যেসব উপায়ে যে কেউ তার রাগ দমন করতে পারে। রাগ দমন করা সকলের জন্য অতীব জরুরি। কেননা, রাগের বশির্ভূত হয়ে মানুষ যা ইচ্ছা তা করতে পারে। আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শিখিয়ে দেওয়া পদ্ধতির মাধ্যমে রাগের সময় নিজেদেরকে সংশোধন করতে পারি। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হজরত আতিয়্যাহ ইবনে উরওয়াহ্ আস সাদী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ক্রোধ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে এবং শয়তানকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আগুন পানি দ্বারা নেভানো যায়। সুতরাং যখন তোমাদের কারও রাগ হয়, তবে সে যেন ওযু করে’ -(আবু দাউদ)। রাগের সময় মানুষের শরীরে উত্তাপ বেড়ে যায়। শিরা-উপশিরা ফুলে উঠে, যা উত্তপ্ত আগুনেরই বহিঃপ্রকাশ। আগুন পানি দ্বারাই নির্বাপিত হয়। যা হাদিসের মাধ্যমে পরিস্ফূট হয়েছে। অন্য হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও কয়েকটি ধারাবাহিক পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। হাদিসের বাণী, ‘হজরত আবু যর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কারও দাঁড়ানো অবস্থায় রাগ আসে সে যেন বসে পড়ে। এতে তার রাগ না কমলে সে যেন চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে’ -(আহমদ, তিরমিজি)। আমাদের সমাজে রাগ নেই এমন লোকের সংখ্যা নিতান্তই কম। তাই বলে রাগের বশির্ভূত হয়ে যা ইচ্ছা তা করে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমরা রাগকে দমন করার মাধ্যমে নিজেকে আরও উঁচু পর্যায়ে নিতে পারি। সমাজের মানুষের জন্য আরও ভালো কিছু করতে পারি। রাগকে দমন না করলে বাড়বে শত্রুতা। যার ফলে সমাজে বৃদ্ধি পাবে কলহ বিবাদ বিসম্বাদ। আসুন নিজেদের রাগ দমনের মাধ্যমে সমাজকে ভালো কিছু উপহার দিই।
লেখক: এম. ফিল গবেষক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান