রাষ্ট্রের উন্নয়নে প্রকৃত সুশীল সেবক ও সুনাগরিক অপরিহার্য
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
দেশ গঠনে দরকার সুশীল সেবক ও সুনাগরিক। জন্মসূত্রে আমরা সবাই দেশের নাগরিক। আমরা সবাই সু-নাগরিক কিনা সেটাই একটি বিষয়। একটি রাষ্ট্রে জন্ম ও বসবাসের সুবাদে নাগরিকতা লাভ করা যায়। আর সেই নাগরিক মানুষের রাষ্ট্রের কাছে তার অনেক দায়িত্ব কর্তব্য, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয় থাকে। কিন্ত আমরা কতটা সচেতনভাবে সেই নাগরিক দায়িত্ব পালন করে থাকি। এটি আমাদের অপারগতা না যোগ্যতার অভাব। যদি অপারগতা হয়, রাষ্ট্রকে সেই অপারগতার বোঝা বহন করতে হবে। অতএব নিঃসন্দেহভাবে বলা যায় যে, ভালভাবে বাঁচতে হলে যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে। তথাকথিত সুনাগরিকের গুণাবলির ঘাটতি নিয়ে বা যোগ্য নামধারীদের দিয়ে দেশ, জাতি, সমাজের কখনো কোনোদিন উন্নতি হবে না। কাজেই আমাদের একটি সুন্দর, সুখী সমাজের প্রত্যাশায় আগামী দিনের সুজন ও সুনাগরিক বৃদ্ধি হওয়া আবশ্যক। বোধ, বুদ্ধিতে ও দায়িত্ব জ্ঞানে সচেতনতা বাড়িয়ে রাষ্ট্রের সেবা করা সম্ভব। এই দায়িত্ব সচেতনার অভাব হলে সুনাগরিক ও সুশীল সেবক হওয়ার অন্তরায় সৃষ্টি হবে। সুনাগরিক ও সুশীল সেবার কাক্সিক্ষত মানে উন্নীত হলে আমাদের রাষ্ট্রকে ক্রমান্বয়ে একটি বলিষ্ঠ জাতিতে পরিণত করা সম্ভব। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৬নং অনুচ্ছেদ থেকে ৪৪নং অনুচ্ছেদ পর্যন্ত নাগরিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকগণ জন্মসূত্রেই রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করে থাকে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অধিকার ভোগের বিনিময়ে নাগরিককে বেশকিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। একজন নাগরিক যখনই অধিকার ভোগ করতে চায়, তখনই তার সঙ্গে কিছু কিছু কর্তব্য পালনের বিষয়েও চলে আসে। অধিকার ও কর্তব্য সমাজবোধ থেকে এসে থাকে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে শুধু সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে তা নয়। একজন নাগরিকও অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে। তবে তাকে সুনাগরিক হতে হবে। কেননা কর্তব্য বিমুখ জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।
নাগরিকের দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিশ্রমকাতরতায় কখনোই জাতীয় জীবনে উন্নতি আসতে পারে না। কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়েই ব্যক্তিজীবন ও সমাজজীবনের উন্নতি লাভ করা যায়, আর কর্তব্য পালনের মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্র সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারি। কর্তব্য-পরায়ণ একজন নাগরিক তার রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতে পারে। একজন নাগরিকের দেশপ্রেম জাগ্রত হয় কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়েই। স্বাধীনতা, সাম্য ও অধিকার ভোগের নিশ্চয়তা কর্তব্য পালনের মধ্যে নিহিত। ভারত, চীন, রাশিয়াসহ অনেক রাষ্ট্রের সংবিধানে নাগরিকের কর্তব্যের উল্লেখ আছেÑ যা আমাদের বাংলাদেশের সংবিধানের ২৬নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে। অধিকার ভোগের বিনিময়ে নাগরিককে বেশকিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। এসব দায়িত্বকে নাগরিক কর্তব্য বলা হয়ে থাকে। এই জন্যই কর্তব্য বলতে সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য কোনোকিছু করা বা না করার দায়িত্বকে বোঝায়। যেমনÑ আইন মেনে চলা, সন্তানকে শিক্ষা দেওয়া, যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়া, অসৎ ও অযোগ্যকে প্রার্থীকে ভোট না দেওয়া ইত্যাদি। এছাড়া রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে গতিশীল, সচল, ন্যায়ানুগ ও প্রাণবন্ত করতে প্রত্যেক নাগরিককে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু এ দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ ও চক্রান্ত বরাবরই তৎপর। এদেশে কয়েকবার সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। ফলে অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে বাধা-বিপত্তিও এসেছে। কিন্তু সব বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে এদেশের জনগণ আন্দোলন ও সংগ্রাম করে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছে। কোনো তাই রাষ্ট্রের উন্নয়নে ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত করার জন্য আসুন আমরা সবাই মিলে গণতন্ত্রের পতাকাতলে সমবেত হয়ে সুশীল সেবক ও সুনাগরিকের ভূমিকা পালন করি।
লেখক: উপ-মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি (পিআরএল), আনসার-ভিডিপি একাডেমি, সফিপুর, গাজীপুর
সম্পাদনা: আশিক রহমান