রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের টাকা সুইস ব্যাংকে জমা হচ্ছে : এম এম আকাশ
এনামুল হক : রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের টাকা সুইস ব্যাংকে জমা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ। গতকাল শনিবার টিভিএনএ নিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। বাংলাদেশিদের সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে টাকা জমা রাখার প্রবণতা বেড়ে গেছে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ নিরাপদ রাখতে সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখছেন কেউ কেউ। সামনে দেশে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ক্ষমতার পালাবদল হওয়ার আশংকায় অনেকে গচ্ছিত অর্থ সুইস ব্যাংকে জমা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ।
বৈধ-অবৈধ পথে দেশ থেকে টাকা নিয়ে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে রাখার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার জন্য দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা, আস্থাহীনতা, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব, বিনিয়োগ করলেও নিরাপত্তার অভাব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকেই দায়ী করেছেন এম এম আকাশ। তিনি বলেন, কালো টাকা দুই রকম হয়। একটা হচ্ছে বৈধ উপায়ে উপার্জিত টাকা, যার ট্যাক্স দেওয়া হয়নি। এটা হচ্ছে ভদ্র কালো টাকা। এটা সরকার সাদা করার জন্য ব্যবস্থা রাখেন। সুতরাং এই ধরনের টাকার সুযোগ আছে দেশের মধ্যেই থাকার। দ্বিতীয় কালো টাকা হচ্ছে অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা। যেটা উপার্জিত হয় চোরাকারবারী, মাদক ব্যবসা বা ঘুষের মাধ্যমে। সে টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে একটু কঠোরতা আছে। এই দুই ধরনের কালো টাকাই ধনীরা ট্যাক্স আর শাস্তি এড়ানোর জন্য পাচার করে থাকেন।
এম এম আকাশ বলেন, সুইস ব্যাংক গোপানীয়তার রক্ষার ক্ষেত্রে ১০০% গ্যারান্টি দেয়। তারা কখনো গ্রাহকের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে না এবং তারা টাকার আয়ের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেন না। অন্য দেশের ব্যাংকগুলো সাধারণত এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে না। এ কারণে সারাবিশ্বের বিত্তশালীরা সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার প্রতি আগ্রহ দেখান। তিনি বলেন, সম্প্রতি ধরা পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে, বিনিয়োগের আবহাওয়া ভালো নেই এবং ক্ষমতার পালাবদলের আশঙ্কা থেকেও টাকা পাচারের প্রবণতা বাড়তে পারে।
অধ্যাপক আকাশ বলেন, ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ কমে গেলেও এক বছরে বাংলাদেশ থেকে জমা রাখার পরিমাণ বেড়েছে। এই সময়ে জমার পরিমাণ বেড়েছে শতকরা ২০ শতাংশ। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৬’ তথ্য হলোÑ এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশিদের এক হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা হয়েছে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে। দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ ২০১৫ সালে ছিল ৫৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ। সেটা ২০১৬ সালে বেড়ে হয়েছে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ (এক সুইস ফ্রাঁ = বাংলাদেশের ৮৬ টাকা)। শুধু সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা জমা রাখাই নয়; বাংলাদেশিরা বিদেশে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করছে তা গতবছর পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতেও উঠে আসে। দেশে রাতারাতি ধনিক শ্রেণির উত্থান দেখা দিয়েছে। এ শ্রেণির মানুষ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সমর্থন পেয়ে থাকে সবসময়। ক্ষমতাসীনদের সহযোগিতায় কালো টাকার মালিকরা তাদের অর্থ বিদেশে বিনিয়োগ করে। আর বিনিয়োগের সময় না পেলে সুইস ব্যাংকে জমা রাখে।
ভারতের উদাহরণ টেনে অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, দেশে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, একই সঙ্গে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করলে সুইস ব্যাংকে টাকা পাঠানোর প্রবণতা কমিয়ে আনা যাবে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ