বাংলাদেশে সমকামীরা ঠাঁই পাচ্ছেন না
লিহান লিমা : বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের ন্যায়বিচার পাওয়া খুব বিরল ঘটনা। ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশে এলজিবিটি কমিউনিটির পুরনো সদস্য মাহবুব রাব্বি ও জুলহাস মান্নান খুন হন। থিয়েটার শিল্পী ও গে এই দুজনকে মান্নানের বাসায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
মান্নান ছিলেন সমকামী আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী এলজিবিটি কমিউনিটি গড়ে তুলেছিলেন এবং এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্য দেশের প্রথম ম্যাগাজিন ‘রুপবান’ প্রকাশ করেছেন।
এই হত্যাকা-ের দায়ে শরিফুল ইসলাম শিহাব (৩৭) নামে একজনকে আটক করা হয়। পুলিশ তাকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একজন সদস্য বলে দাবি করে। যদিও শিহাব এটি অস্বীকার করে। হত্যাকা-ের এক বছর পরও এই মামলার কোনো সুরাহা হয়নি। মান্নান ও তনয়ের হত্যাকা-ের পর বাংলাদেশে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের অবস্থান বদলে গেল। অনেক গে তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেককে আটক করা হয়েছে, কেউ কেউ হত্যার হুমকি নিয়ে বেঁচে আছেন। অনেকে বাংলাদেশে অবস্থিত বৈদেশিক দূতাবাসগুলোর সাহায্যে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছেন। কিছু কিছু মানুষ সুইডেন, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। মান্নানের হত্যাকা-ের পক্ষে যারাই কথা বলেছেন তাদেরই হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ঢাকা ট্রিবিউনকে দক্ষিণ-এশিয়ার আল-কায়দা গোষ্ঠীর কাছ থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
রুপবানের কো-ফাউন্ডার বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার জুলহাসের মৃত্যুকে চাপা দিতে পশ্চিমা বিরোধী সুর ব্যবহার করেছে। জুলহাস বাংলাদেশি নয়, গে পশ্চিমা সভ্যতার অংশ, বাংলাদেশে তাদের কোনো স্থান নেই। গত নির্বাচনের পর বাংলাদেশে এলজিবিটি সম্পদ্রায় খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ২০১৭ সালের মে’তে ২৮ জন এলজিবিটি সদস্যকে প্যারামিলিটারি বাহিনী প্রকাশ্যে আটক করে।
এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মৌলবাদী সমকামীবিরোধী হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে তুলেছে। ২০১৩ সালে এই গোষ্ঠী শাহবাগে আন্দোলন করে পুরো বাংলাদেশ অচল করে দিতে চেয়েছিল। হেফাজতের সঙ্গে মিত্রতা আওয়ামী লীগের ভোটের ব্যালট বাক্স পূর্ণ করবে। তার জন্য তারা হেফাজতের কিছু বিতর্কিত দাবিও মেনে নিয়েছে। কওমি মাদ্রাসার ডিগ্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সম্মান দিয়েছে। প্রাইমারি স্কুলের বই থেকে বাঙালি শব্দ ও সুফী কবিতা মুছে দেওয়া হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে লেডি জাস্টিস সরানো হয়েছে।
২০১৬ সালের ২২ আগস্ট বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে খসড়া পাস করে। এই আইনে ধর্ম নিয়ে আঘাত করলে মৃত্যুদ-, কারাদ- ও জরিমানার বিধান করা হয়। ২০১৩ সালে মোট একশ জন ব্লগার, সাংবাদিক ও লেখককে আটক করা হয়। যা মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের উদারহণ।
মৃত্যুর দুই বছর আগে মান্নান তার এক বন্ধুকে বার বার হত্যার হুমকি নিয়ে কথা বলেন। মান্নানের বন্ধু তাকে বাইরে যেতে পরামর্শ দিলে মান্নান বলেন, আমি শহীদ হতে চাই না কিন্তু কখনো পলাতকও হব না। মান্নাদের মৃত্যুর দশ দিন পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমাদের সমাজ কোনো সমকামী সম্পর্ক সমর্থন করে না।’ জুলহাস ও তনয়ের মৃত্যু এবং তাদের হত্যাকারীদের বিচারে ব্যর্থতা গে সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের বিরূপ অবস্থানই প্রমাণ করে।
সূত্র : দ্য নিউইয়র্ক টাইমস থেকে অনূদিত