শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ ও প্রতিকার
ডা. জাকির হোসেন
বড়দের কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে কম বেশি সবাই একটু সচেতন হলেও ছোটদের কোষ্ঠকাঠিন্য আমাদের মা-বাবারা একটু কমই সচেতন। শিশুদের পায়খানা শক্ত হওয়া কিংবা একাধারে দু-তিনদিন পায়খানা না করার সমস্যায় পড়েননি এমন মা-বাবা খুবই কম আছেন। শিশুর মলত্যাগে কষ্ট, ব্যথা পাওয়া ইত্যাদি যে কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ তা বেশিরভাগ মাতা-পিতা জানেনই না। কোনো শিশু যদি সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ করে, পায়খানা যদি খুব শক্ত হয়ে দানায় দানায় বের হয় এবং পায়খানার সময় মলদ্বারে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে তবে তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের অনেক কারণ থাকে। সাধারণত শিশুদের দুই ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এক ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় শুধুমাত্র অভ্যাসগত ত্রুটির কারণে। এই ক্ষেত্রে শিশুর শারীরিক অন্য কোনো রোগ থাকে না। এই ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য যে সকল কারণ দায়ী তা হলোÑ মাতা-পিতার শিশুদের মলত্যাগের প্রতি নজর না দেওয়া, শিশুদের খাদ্যাভ্যাস সঠিকভাবে গড়ে না তোলা। শিশুরা বরাবরই একটু খামখেয়ালি প্রকৃতির হয়ে থাকে। এরা শাক-সবজি ফল খেতে চায় না বরং এই সকল খবারের পরিবর্তে তারা ঘরের বাইরে তৈরি বিভিন্ন চকলেট, চিপস এবং আইসক্রিম খেতে পছন্দ করে। পর্যাপ্ত পানি পানেও এদের অনীহা। যে সকল মাতা-পিতা ঘরের বাইরে কর্মব্যস্ত সময় পার করেন তারা সঠিক সময়ে শিশুকে নিয়মিত মলত্যাগর অভ্যাস তৈরি করতে পারেন না। তাছাড়া শিশুরা খেলায় একবার মেতে উঠলে আর কোনো দিকে খেয়াল থাকে না। বেশিরভাগ শিশুরই এসব কারণে অভ্যাসগত (ঐধনরঃঁধষ পড়হংঃরঢ়ধঃরড়হ) কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। আরেক ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় যাকে অর্গানিক কনস্টিপেশন বলে (ঙৎমধহরপ পড়হংঃরঢ়ধঃরড়হ)। এই ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য শিশুর শারীরিক সমস্যা দায়ী। সাধারণত এই ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য দুই ধরনের শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে। এক ধরনের শারীরিক সমস্যা থাকে যেগুলো ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব। আরেক ধরনের শারীরিক সমস্যার জন্য সার্জারি বা অপারেশনের দরকার পড়ে।
বেশিরভাগ মা-বাবারা শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের বিষয়টিকে গুরত্বের সঙ্গে দেখেন না। দীর্ঘদিন শিশুর এই সমস্যা থাকতে থাকতে শিশুর আরও নানাবিধ জটিলতা তৈরি হতে থাকে। অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে শিশুর মলদ্বার ছিড়ে গিয়ে রক্ত পড়তে পারে বা মলদ্বার পায়ুপথে বের হয়ে আসতে পারে, পরিপাক তন্ত্রের গতিপথ বন্ধ হয়ে শিশুর জীবন সংকটাপন্ন হতে পারে।। এছাড়া হতে পারে শিশুর প্রসাবের রাস্তায় সংক্রমণ। এ রোগের চিকিৎসায় সর্বপ্রথম মাতা-পিতাকে সচেতন হতে হবে। ধৈর্য ও সময় নিয়ে শিশুকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন করতে হবে। চিকিৎসকের নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করতে পারলেই এ অনাকাক্সিক্ষত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান