মামা তুমি ঘুমাও, শাহবাগ জেগে আছে
মাহফুজ জুয়েল
চলে গেলেন আমৃত্যু বিদ্রোহী বীর বাঙালি শহীদুল হক মামা। ৩০ জুন তিনটা ২১ মিনিটে কাতারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি কিডনি ও হার্ট সমস্যায় ভুগছিলেন। ২৮ এপ্রিল ঢাকা থেকে কাতার এয়ারওয়েজে স্টকহোমে যাত্রাকালে তিনি হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২৯ এপ্রিল তাকে কাতারের আলওয়াকরা এলাকায় হামাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ৪ মে তিনি কোমায় চলে যান। তারপর প্রায় দুই মাসের কোমাজীবন শেষে তিনি চিরতরে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। শাহবাগ আন্দোলনের সময় শহীদুল মামা একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘দুঃখ ভরা মন নিয়ে সাক্ষ্য দিয়ে গেলাম আবার আদালতের রায় শুনে হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে এখন শাহবাগ চত্বরে আমি আমার সন্তানদের মাঝে আছি। আমি প্রতিদিনই যাচ্ছি। তাদের সাহস দিচ্ছি। আমি বলেছি, এই জল্লাদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমি ফিরে যাচ্ছি না সুইডেনে। শাহবাগের ছেলে-মেয়েরাই আমার সন্তান আর আমি হলাম এদের অভিভাবক।’ কাগুজে অর্থে নয়, আক্ষরিক অর্থেই বীর ছিলেন শহীদুল মামা। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ২ নম্বর সেক্টরের মেলাঘর ইউনিটের প্রধান হিসেবে বিহারিদের দখলে থাকা দুর্ভেদ্য ঘাঁটি মিরপুর মুক্ত করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে করা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের দ্বিতীয় সাক্ষী ছিলেন তিনি। একাত্তরের পর ২০১৩ সালে মামাকে নতুন করে কাছে পায় শাহবাগের নতুন প্রজন্ম। গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক, অভিভাবক ও অনুপ্রেরণা ছিলেন তিনি। লাখো তরুণের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে তিনি তখন নতুন মুক্তিযুদ্ধে সামিল হন। নতুন আশায় নতুন স্বপ্নে বুক বাঁধেন। তার মতো অভিজ্ঞ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গ-সংস্পর্শে অনেক তরুণ উজ্জীবিত হয়। তার মৃত্যুতে হয়তো, ‘এক শহীদুল লোকান্তরে’ চলে গেল, কিন্তু লক্ষ শহীদুল বাংলার ঘরে ঘরে জেগে আছে।
লেখক: কবি, সাংবাদিক ও আন্দোলনকর্মী
সম্পাদনা: আশিক রহমান