আমাকে ওরা মেরে ফেলবে : ফরহাদ মজহার ফরহাদ মজহার অপহৃত, মুক্তিপণ দাবি
সুজন কৈরী : সাহিত্যিক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ জানতে পেরেছে, সর্বশেষ তার অবস্থান ছিল খুলনা অঞ্চলে। গতকাল সোমবার ভোরে নিজ বাসা থেকে বের হওয়ার পর তাকে অপহরণ করা হয় বলে পরিবারের সদস্যরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার রাজধানীর আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নম্বর ১০১) করেছেন। ফোনে ফরহাদ মজহার তার স্ত্রীকে বলেন, আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ এ কথা বলেই তিনি ফোনটি কেটে দেন। পরিবারের অভিযোগ, এক পরিচিত ব্যক্তির ফোন পেয়ে গতকাল ভোর ৫টার দিকে মোহাম্মদপুর লিংক রোডের ৪/এ/বি নম্বরের হক গার্ডেনের চতুর্থ তলার নিজ ফ্ল্যাট থেকে বের হন ফরহাদ মজহার। পরে ৯টা ২৯ মিনিটের দিকে তিনি তার স্ত্রী ফরিদা আখতারকে অন্য একটি নম্বর থেকে ফোন করে বলেন, ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। পরে তার ফোন থেকে আবারও ফোন করে ফরিদা আখতারের কাছে ৩৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। এভাবে কয়েক দফা ফোন করে টাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। না পেলে তার প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। পরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে ফরহাদ মজহারের অপহরণের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করা হয়। এছাড়া এ অপহরণের ঘটনায় আদাবর থানায় একটি জিডিও করা হয়েছে। এরপর তেজগাঁও জোনের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আদাবর থানার পুলিশ সদস্যরা কবির ফ্ল্যাট পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, ঘটনার বিষয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গতকাল বিকেলে ফরহাদ মজহারের বাসায় যান পুলিশের একজন অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক, আদাবর থানার ওসি ও এএসআই পর্যায়ের তিনজন কর্মকর্তা। তারা অপহরণের বিষয়ে কথা বলার সময় হঠাৎ করেই অজ্ঞাত স্থান থেকে ফরহাদ মজহার তার স্ত্রী ফরিদা আখতারের কাছে টেলিফোন করেন। পরে মোবাইল ফোনটি নিয়ে তিনি দৌড়ে চলে যান পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে। ফোনে অপহরণকারীদের দাবির বিষয়ে কথা বলেন ফরহাদ মজহার।
ফরিদা আখতার বলেন, তিনি টেলিফোনে ফরহাদ মজহারকে জানিয়েছেন যে সবাইকে টাকার কথা বলা হয়েছে। সবাই জোগাড়ের চেষ্টা করছে। কিন্তু এখনো জোগাড় হয়নি। পরে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘টাকা না হলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ টেলিফোন আলাপ সম্পর্কে উপস্থিত ব্যক্তিদের ফরিদা আখতার আরো বলেন, ‘ও (ফরহাদ মজহার) বলছে, টাকার ব্যবস্থাটা হইছে? এটা জানা দরকার ছিল। জানা দরকার বলে আমি একটু পরে ফোন করতেছি, কোথায় দিতে হবে।’ ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমার এক নম্বর কনসার্ন হলো তার ফিজিক্যাল সেফটি (শারীরিক নিরাপত্তা)। এইটার উপরে আর কোনো কথা নাই।’
পরিবারের বরাত দিয়ে আদাবর থানার এসআই মোহসিন আলী বলেন, সকাল ১০টার দিকে ফরহাদ মজহারের এক আত্মীয় থানায় এসে অভিযোগ করেন, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, ফরহাদ মজহারের বাসায় এখন শুধু তার স্ত্রী রয়েছেন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ফরহাদ মজহারের বাড়ির সামনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ভোর ৫টা ৫ মিনিটে স্বাভাবিক পোশাক পরে তিনি হেঁটে বাসা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। তার পরিবারের তথ্য অনুযায়ী, তিনি সাধারণত ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন। তবে এত ভোরে তিনি বাসা থেকে বের হন না। সাধারণত সকাল ৮টা থেকে ১০টার পরেই বাসার বাইরে যান। কিন্তু তিনি বাসা থেকে বের হওয়ার পর ৫টা ২৯ মিনিটে তার স্ত্রীর ফোনে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে ওরা, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ বিপ্লব কুমার বলেন, আমরা ফরহাদ মজহারের ফোন ট্র্যাক করে জানতে পেরেছি, তার অবস্থান কখনো আরিচা, কখনো ফরিদপুর আবার কখনো মাগুরায়। ওনার লোকেশন পরিবর্তন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দিকে তার অবস্থান সনাক্ত হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ রাখছি। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী তার অবস্থান খুলনা অঞ্চলে রয়েছে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ফরহাদ মজহারের অবস্থান সনাক্ত ও তাকে উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে গতকাল বিকেল শ্যামলী রিং রোডে ফরহাদ মজহারের বাসায় যান তার দুই বন্ধু গৌতম দাস ও মোস্তাহির জহির। তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাও বলেন। এ সময় মোস্তাহির জহির বলেন, ফরহাদ মজহারকে যে বা যারাই অপহরণ করে নিয়ে যাক না কেন, তাকে দ্রুত উদ্ধারের জন্য দেশের প্রশাসন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে তার পরিবার। ফরহাদ মজহার কেন এত ভোরে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তার বন্ধু গৌতম দাস জানান, ফরহাদ মজহার রাত ৩টা থেকে ৪টার দিকে ঘুম থেকে ওঠেন। এরপর তিনি বিভিন্ন পড়াশোনা ও লেখালেখির কাজ করেন। ফরহাদ মজহারকে বাসা থেকে বের হতে কেউ দেখেছে কি না জানতে চাইলে মোস্তাহির জহির জানান, তাকে বাসা থেকে বের হতে বাড়ির দু-একজন নিরাপত্তারক্ষী দেখেছেন। তবে তাকে কেউ নিয়ে গেছে কি না সেটি তারা দেখেননি। এছাড়া ভবনের নিচে লাগানো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় দেখা গেছে যে তিনি ভবন থেকে বের হচ্ছেন।
অপরদিকে ফরহাদ মজহারকে খুঁজতে খুলনার ইব্রাহীম রোডে অভিযান চালিয়েছে র্যাব। সেখানে ফরহাদ মজহারকে পাওয়া না গেলেও একটি মাইক্রোবাস পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে র্যাব। র?্যাব ৬-এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, নগরীর শিববাড়ী মোবাইল টাওয়ারে ফরহাদ মজহার সর্বশেষ কথা বলেছেন বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। এ কারণে কেডিএ সংযোগ সড়কে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে সব যানবাহন তল্লাশি চালাচ্ছেন। একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি বাড়ি ঘিরে রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ফরহাদ মজহারের যে নম্বর দিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। অভিযান এখযুক্তরাষ্ট্রের ২৪১তম স্বাধীনতা দিবস আজ
আনোয়ারুল করিম: যুক্তরাষ্ট্রের ২৪১তম স্বাধীনতা দিবস আজ। ১৭৭৬ সালের এই দিনে ব্রিটিশ শাসনাধীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল (ডিক্লারেশন অব ইনডেপেন্ডেস) এবং এক সার্বভৌম আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের (ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা) জন্ম হয়েছিল। সেই থেকে প্রতিবছর এ দিনে পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে সকল বর্ণ, ধর্ম, বিশ্বাস, লিঙ্গ, সংস্কৃতি ও প্রজন্মের মধ্যে স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়। এ উপলক্ষে আজ ফেডারেল হলিডে থাকবে সারা আমেরিকায়। স্বাধীনতা দিবসের বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জা হবে নিউইয়র্কসহ গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ সিটিতেই। নিউইয়র্ক সিটির হাডসন নদীতে এবারও সূর্যাস্তের পরই বিশ্বখ্যাত আতশবাজি অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ মিনিটের এ আতশবাজির মাঝে ঘটবে দৃষ্টিনন্দন এবং ইতিহাসভিত্তিক বিভিন্ন দৃশ্যের উপস্থাপন। মধ্য আকাশে মনোজ্ঞ এ দৃশ্য তৈরীর জন্যে ৪০ হাজারের অধিক ফায়ারওয়ার্কসের সম্মিলন ঘটবে। পাশাপাশি চলবে সঙ্গীত দলের দেশাত্মবোধক গান। এ অনুষ্ঠানে কয়েক লাখ আমেরিকানের সমাগম ঘটবে। একইভাবে ওয়াশিংটন ডিসি, ডিজনি ওয়াল্ট, লাসভেগাস, হলিউড, মায়ামী, বস্টন, নর্থ ক্যারলিনা, হিউস্টন, ডালাস প্রভৃতি স্থানেও আতশবাজির বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান হবে স্বাধীনতা দিবসের আমেজে। নিউইয়র্ক সিটির এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়েও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশেষ আলোকসজ্জা করা হবে। হারিকেন স্যান্ডি আঘাতের সময় থেকে বন্ধ করা ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ এদিন সর্বসাধারণের জন্যে মুক্ত রাখা হবে।