‘কাইল সকালে হইবোরে তোর বিয়া’
১৯৮৮ কি ১৯৮৯ হবে। আমাদের ব্যান্ড চাইম তখন তুঙ্গে। আমার খালাত ভাইদের ব্যান্ড ঙনংপঁৎবও তখন তুঙ্গে। এক ফ্যামিলতে দুই ব্যান্ড তুঙ্গে। বাকি থাকল মামাত ভাইয়েরা। ছেলে বা মেয়ে হোক, দুইটা সন্তানই যথেষ্টর মতো এক ফ্যামিলিতে দুইটা ব্যান্ডই যথেষ্ট। কিন্তু এখানে একটা বিষয় আছেÑ পারিবারিক মান-মর্যাদা বলে তো একটা কথা আছে। খালাত ভাইয়েরা হিট করে যাবে আর মামাত ভাইয়েরা কি মুখ বুজে সব সহ্য করবে, তা তো হয় না, তা তো হতে দেওয়া যায় না। মামাত ভাইয়েরা এসে আমাকে জানাল ওরা ব্যান্ড করবে। আমি উৎসাহ দিলাম। খুব ভালো কথা। জিজ্ঞাসা করলাম, গান গাবে কে? সেজো মামাত ভাই: আমি। আমি: মিউজিশিয়ান কে কে হবে?
সেজো মামাত ভাই: মেজো ভাই বাজাবে বেজ, রুবেল বাজাবে ড্রাম, লিডে কাউকে নিয়ে নিব। আমি: ঠিক আছে, আমাকে একটা গান শোনা। সেজো মামাত ভাই গান ধরল। এক লাইন গান গাওয়ার পর আমি রেফারির বাঁশি বাজানোর মতো করে বললাম: দাঁড়া। আমি তো গান গাইতে বললাম। সেজো মামাত ভাই: ভাই, আমি তো গাই গাইতেছি। আমি: মানে? এইটা গান? সেজো মামাত ভাই: হ্যাঁ ভাই, আমি তো ড়নংপঁৎব-এর ছাইড়া গেলাম মাটির পৃথিবী গাইতেছি। আমি তো ওর কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। আমার মনে হইলো আমি নিজেই মাটির পৃথিবী ছাইড়া রওনা দিয়া দিছি। আমার জীবনে ওই এক লাইনই যথেষ্ট ছিল। ও না বললে বুঝতেই পারতাম না যে ও গান করছে। মনে পড়ে গেল একটা ঘটনা, একবার এক বাসায় গিয়েছি এখানে। ওনারা গোল গোল বিস্কুটের চাইতে একটু বড়, আটা দিয়ে বানানো কি যেন খেতে দিয়েছেন, আমি খাচ্ছি। খেতে খেতে জিজ্ঞাসা করলাম: ভাবি এটা কি? ভাবি: এটা বাসায় বানানো ডালপুরি। আমি: ও আচ্ছা। বিশ্বাস করেন ভাইয়েরা আমার, আমারে না কইয়া দিলে আমি জিবনেও বুঝতাম না ওইটা ডালপুরি, বড় বিস্কুট বইলা মনরে বুঝ দিতাম। আরেকটা কথা বিশ্বাস করেন, ভেতরে ডাইল বইলা কিচ্ছু নাইÑ পুরা হৃদয় সাগর মরুভূমি। আরে ডাইলপুরিতে ভরতি ডাইল না থাকলে ভালো লাগে?
যাই হোক, ফিরে আসি মূল ঘটনায়। ও আবার গান ধরতে গেল। আমি বললাম: প্লিজ, আমার কথাটা শোন, ভাইটি আমার, তুই গান গাওয়ার চেষ্টা করিস না। তুই ভালো স্টুডেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িস, এটাই তোর বিরাট অ্যাচিভমেন্ট। তুই ইঞ্জিনিয়ার হবি, তাতেই আমরা অনেক খুশি, তুই আমাদের মুখ অলরেডি উজ্জ্বল করে দিয়েছিস। তুই এক কাজ কর, অন্য কাউকে নে গায়ক হিসেবে। আমার কথা শুনে ওর মন খুব খারাপ হলো। ও বলল: ভাই আমার গান কি মোটেই হয় না। আমি: দেখ, খামোখা মিথ্যা কথা বলে তো লাভ নাই, তুই অন্যকিছু ট্রাই কর। সেজো মামাত ভাই: তাহলে আমি কি লিড বাজাব? আমি: আহা, আরে আগে তো গিটার বাজাতে শিখতে হবে, তার পর তো লিড। সেজো মামাত ভাই: ভাই, আমরা এখনো লিড গিটারিস্ট নেই নাই তাই ওই পদটা খালি আছে। আমি: আরে এইটা তো কোনো অফিস না যে পদ খালি থাকলেই বিএ পাস করা একজনকে লিড গিটারিস্ট হিসাবে নিয়ে নিবি। আগে তো তোকে শিখতে হবে গিটার। সেজো মামাত ভাই: ভাই আপনি কিন্তু আমাদের যবষঢ় করছেন না। আমাদের একটু যবষঢ় করেন, আমাদের একটু উঠায় দেন। আমি: কোথায় উঠায় দিব? সেজো মামাত ভাই: ভাই আমাদের একটু ব্যাক দিয়ে বামবা তে ঢুকায় দেন। আমি: তুই কি পাগল? ব্যান্ডই হলো না, আগেই বামবা তে ঢুকতে চাস, আশ্চর্য! তুই আগে একটা ভালো ভোকালিস্ট আর লিড গিটারিস্ট খুঁজে বার কর, তারপর আমি সবকিছু করার ব্যবস্থা করব। (চলবে-০১)
লেখক: কলামিস্ট ও সঙ্গীতশিল্পী
সম্পাদনা: আশিক রহমান