প্রাক কথন
শেখ মিরাজুল ইসলাম
৯০০ হতে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে মুসলিম-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মভিত্তিক রাজ্য শাসনের যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়, ক্রমে তা স্থির হয় ইসলামি জিহাদি ও ক্রুসেডের নাইট টেম্পলারদের ব্যক্তিগত শত্রুতায়। নিজ ধর্মের পরিচয় রক্ষা করতে গিয়ে তারা ভুলে যায় নিজ নিজ ধর্মের মূল কিতাবকে। এদিকে একদিকে মুসলমানদের শিয়া-সুন্নি বিভক্তিকে কেন্দ্র করে আব্বাসীয়-উম্মাইয়া-ফাতিমিদ খেলাফতের রক্তাক্ত ক্ষমতার লড়াই ও সেই সুযোগে সেলজুক তুর্কিদের মুসলিম বিশ্বের অভিভাবক বনে যাওয়া। অন্যদিকে খ্রিস্টীয় জগতে ভ্যাটিকাম ও বাইজেন্টাইন চার্চের আধিপত্যের লড়াই পুরো ইউরেশিয়াকে ব্যস্ত করে রেখেছিল।
সেই সুযোগে ১০৯২ সাল নাগাদ ইসমাইলি গোত্রের এক চতুর নেতা হাসান বিন সাবাহ পারস্যের আলমুত পর্বতে শক্ত ঘাঁটি বানিয়ে সৃষ্টি করলেন ‘হাসাসিন’ (অর্থ অভিভাবক) নামের প্রথম গোপন সংগঠন। পরবর্তীতে ইংরেজিতে ‘অ্যাসাসিন’ শব্দটি উদ্ভূত হয় তা হতে। এই গোপন সামরিক সংগঠনটি একাধারে ক্রুসেডার ও মুসলিম নেতাদের ভাড়াটে খুনি সাপ্লাই দিয়ে প্রভূত অর্থ ও ক্ষমতা উপভোগ করতে থাকে পরবর্তী দুইশ বছর। তাদের কার্যধারা ছিল পুরোপুরি প্রাতিষ্ঠানিক। তাদের অনুসৃত ‘মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী’ সেøাগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে এশিয়া ও ইউরোপে পরবর্তী পাঁচশ বছর অৎস্র গোপন সংগঠন গড়ে ওঠে। ইউরেশিয়ায় ‘মিথ্রা’, ‘চারকোল-বার্নারস’, ‘উইচ-সাবাথ’, ‘দ্য অর্ডার অব পিকক এঞ্জেলস’, ‘দ্য ক্যাসট্রেটোরস অব রাশিয়া’, ‘ইলুমিনাতি’ ইত্যাদি নানা ধর্মভিত্তিক গোপন সংগঠন শান্তির নামে পৃথিবীতে কেবল অশান্তি বাড়িয়েছে।
বলাবাহুল্য আজকের তালেবান-আল কায়দা-আইএসএস ইত্যাদি জঙ্গি সংগঠনগুলো সেই অরগানোগ্রামের সর্বশেষ সংস্করণ মাত্র। সুতরাং হে সুশীল সমাজÑ এই লড়াইটা বুঝতে হলে, একে থামাতে হলে এর ইতিহাস জানাটাও বেশি জরুরি। এখন প্রশ্ন, আপনি কতটুকু জানেন। চর্মচোখে যা দেখছেন তাই কি সব?
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান