ঈদ যাত্রায় সড়ক দূর্ঘনায় নিহত ২৭৪ জন,আহত ৮৪৮ জন দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির
আনিসুর রহমান তপন : গত ঈদুল ফিতরের আগে রাজধানী থেকে নাড়ীর টানে বাড়ির পথে এবং ঈদ শেষে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে ফিরে আসার সময় সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৭৪ জন। আর আহত হয়েছেন ৮৪৮ জন। গতকাল মঙ্গলবার সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ২০৫ টি সড়ক দূর্ঘটনায় এবার হতাহতের সংখ্যা গত ঈদুল ফিতরের চেয়ে বেশি বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এসময় দূর্ঘটনা রোধ ও হতাহতের সংখ্যা কমানোর দাবিতে ১২ দফা সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে একই সময়ে ১২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮৬ জন নিহত হয়েছিলেন, আহত হয়েছিল ৭৪৬ জন। এ হিসাবে এবার ঈদে দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা গতবারের চেয়ে ৮৮ জন বেশি এবং আহতের সংখ্যা বেশি ১০২ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার ঈদে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সম্মিলিত ভাবে ২৪০ টি দুর্ঘটনায় ৩১১ জন নিহত ও ৮৬২ জন আহত হয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলণে জানান সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
এতে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়েছে। এবারের ঈদে রেশনিং পদ্বতিতে ছুটি থাকায় ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। তাতে বেড়েছে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
১৯ জুন থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে ১ জুলাই কর্মস্থলে ফেরা পর্যন্ত ১৩ দিনে ২০৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭৪ জন নিহত ও ৮৪৮ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে নৌ-পথে ১টি দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছে। উল্লেখিত সময়ে ট্রেনে কাটা পড়ে পূর্বাঞ্চলে ২৫ জন ও পশ্চিমাঞ্চলে ৯ জন সহ মোট ৩৪ জন নিহত হয়। ২২টি জাতীয় দৈনিক, ৬টি আঞ্চলিক দৈনিক ও ১০টি অনলাইন দৈনিক এ প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করে এ প্রতিবেদন তৈরী করা হয়েচে বলে জানায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯ জুন ১২ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ৯২ জন আহত হয়। ২০ জুন ০৬ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ০৬ জন নিহত ২০ জন আহত হয়। ২১ জুন ১২ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ১৮ জন আহত হয়। ২২ জুন ১১ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ৩৯ জন আহত হয়। ২৩ জুন ১৫ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত ৩৫ জন আহত হয়। ২৪ জুন ২০ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ৪১ জন নিহত ৮৫ জন আহত হয়। ২৫ থেকে ২৮ জুন ৬০ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ৮০ জন নিহত ১২৮ জন আহত হয়। ২৯ জুন ২৩ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত ১২৪ জন আহত হয়। ৩০ জুন ২১ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ৭৮ জন আহত হয়। ১ জুলাই ২৫ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ২২ জন নিহত ২২৯ জন আহত হয়।
পর্যবেক্ষণে বলা হয় মোট যানবাহনের ৩৮ ভাগ বাস, ৩৪ ভাগ ট্রাক ও পিকআপ, ২৪ ভাগ নছিমন-করিমন, ভটভটি-ইজিবাইক, অটোরিক্সা ও মোটরসাইকেল, ৪ ভাগ অন্যান্য যানবাহন এসব দুর্ঘটনা ঘটায়। ধরণ বিশ্লেষনে দেখা যায়, পথচারি ৩৬ শতাংশ, মুখোমুখি সংঘর্ষ ৩৮ শতাংশ, ওভারটেকিং ১৩ শতাংশ, অনান্য কারনে ১৩ শতাংশ দূর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, বেশি গতিতে যানবাহন চালানো, অদক্ষ চালক দ্বারা যানবাহন চালানো, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, মহাসড়কে অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সা, নসিমন-করিমন চলাচল, রাস্তার উপর হাটবাজার ও ফুটপাত দখল, ফুটপাত না থাকা, বিপদজনক ওভারটেকিং, বিরতিহীন/বিশ্রামহীন ভাবে যানবাহন চালানো, ভাঙ্গা রাস্তা এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ে সড়ক দূর্ঘটনা গবেষণা ইউনিট গঠন, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ, যানবাহানের ফিটনেস পদ্ধতি ডিজিটাল করা, রাস্তার রোড সেফটি অডিট করা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা, প্রশিক্ষিত চালক গড়ে তোলা, ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা, মহাসড়কে ধীরগতির যান ও দ্রুত গতির যানের জন্য আলাদা আলাদা লেইনের ব্যবস্থা করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু পদ্বতি আধুনিকায়ন, মহাসড়কে নছিমন-করিমন, ব্যাটারি চালিত রিক্সা, অটোরিক্সা বন্ধে সরকারের গৃহিত সিদ্ধান্ত শত ভাগ বাস্তবায়ন, ভাঙ্গা রাস্তা মেরামত করা, মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া জরুরী বলে দাবি করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি ।