‘কাইল সকালে হইবোরে তোর বিয়া’
যাইহোক এসব শুনে মেজাজ খারাপ করে বিদায় নিল মামাত ভাই। আমিও হাফ ছেড়ে বাচলাম এই ভেবে যে কমপক্ষে এক মাস সময় তো ওদের লাগবেই ভোকালিস্ট আর গিটারিস্ট খুঁজতে। আরে কিসের একমাস। পরের দিনই মামা সকালে এসে গটগট করে আম্মার ঘরে ঢুকলেন। আমাকে দেখে একটা কথাও বললেন না। বুঝলাম ভিশন রেগে আছেন মামা। দরজা বন্ধ করে দিলেন আম্মার ঘরের। দুই ভাই-বোনের কথা হলো। ঠিক ১৫ মিনিট পর আমার ডাক পড়ল। গেলাম। মামা বললেন: তা হারে, তুই নাকি (ছেলের নাম নিয়ে) ওদের উঠায় দিচ্ছিস না? তুই নাকি বলেছিস (ছেলের নাম নিয়ে) ও কোনো গান গাইতে পারে না? ও তো আমাদের ৫টা গান শুনাল, ও তো খুব সুন্দর গান গায়। (আম্মার দিকে তাকিয়ে) বুঝেছ বুবু, ওর গলা কি সুন্দর, কি সুর গলায়। আমি খুব আশ্চর্য হয়ে মামার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। মনে করতে চেষ্টা করলাম যে কেমন গেয়েছিল সেজো মামাত ভাই। আমি দিব্যি করে বলছি, ওর কোনো গান হয় না, অসম্ভব বেতালা, বেসুরা, কি বলব! বলার কিছু নাই। একটা উদাহরণ দিইÑ কোনো বাদাম ওয়ালারে দিয়া কি প্লেন চালানো সম্ভব? আমি যতই এনকারেজ করি না কেন, লাভ হবে?
মামা আবার বললেন: ছোট ভাইদের সঙ্গে এরকম করলে চলবে? আম্মার সঙ্গে যোগ দিলেন: ওরা তোমার ছোট ভাই, তুমি ওদের উঠায় দিবা, তা না করে তুমি ওদের সঙ্গে এমন করছো কেন? আমি হাসব না কাঁদব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এখন পর্যন্ত কোনো সুযোগ পাই নাই কথা বলার। যতবার কিছু বলতে যাই ততবার মামা হাত দিয়ে থামিয়ে দেন আমাকে এবং ওনার পরের কথাগুলো বলেন। মনে মনে কিন্তু আমি ভীষণ হাসছিলাম। আম্মা আর মামা বলে কি! – একেই বুঝি বলে মামা বাড়ির আবদারÑ শুধু শুনেছিলাম কথাটা, এবার আমার জীবনে সত্যি হয়ে গেল। আম্মার কঠোর অর্ডার আমাকে: আম্মা: শোনো, ওদেরকে ডেকে বলে দাও কি করতে হবে, ওদের ব্যান্ড বানায় দাও, তোমাদের সঙ্গে ওদের নিয়ে নাও। আমি: ওদের নিয়ে নাও মানে? আম্মা: তোমাদের ব্যান্ডে ওদের নিয়ে নাও। আমি: আম্মা, এটা কি দোকান নাকি যে কর্মচারী হিসেবে ওদের নিয়ে নিব? ওরা যা বলল আপনারা তাই বিশ্বাস করলেন? মামা: তুই অত কথা বলছিস কেন? বুবু যা বলল তাই কর। লাডলার ব্যান্ড আছে, তোর ব্যান্ড আছে, ওদের একটা থাকবে না? আমি: আশ্চর্য মামা, আমি কি ওদের ব্যান্ড করতে বারণ করেছি, আমি তো শুধু অন্য সিঙ্গার নিতে বলেছি। আর তাছাড়া ব্যান্ড তো টেলিভিশন না যে প্রতি বাসায় একটা করে থাকতে হবে। মামা: তার মানে তুই কি বলতে চাস? ওদের একটা ব্যান্ড থাকবে ন? আমি: মামা আমি তো তা বলিনি। (মনে মনে বললাম কারে কি কই) ঠিক আছে ওদের পাঠিয়ে দিয়েন। পরের দিন আমার সেজো মামাত ভাই চলে এলো, সঙ্গে মেজো মামাত ভাইও এলো। ও বেজ গিটার বাজিয়ে শোনাল। ওর বাজানো ভালো লাগল। এবং এটা বুঝলাম যে ও তাল লয় বোঝে এবং মিউজিক সেন্স আছে। ওদের বলে দিলাম একটা ভালো গায়ক আর লিড গিটারিস্ট খুঁজে নিয়ে আসতে। ওদের ভিশন এনকারেজ করলাম। ওরা এনকারেজড হয়ে চলে গেল। সেজো মামাত ভাইয়েরা সমানে গায়ক ও গিটারিস্ট খুঁজে বেড়াতে শুরু করল। আমাদের মোহাম্মদপুরে এক ছেলে থাকত, নাম সোহেল। ও গান গাইতে পারত। ও একদিন আমার বাসায় আসল এবং বলল: টুঁলু ভাই, আমি আপনার মামাত ভাইদের বাসায় গেছিলাম। আমিঃ কেন? সোহেল: ওরা আমারে ওদের ব্যান্ডের ভোকালিস্ট হিসেবে নিতে চাইছিল। আমি গেলাম ওদের বাসা, সেই মিরপুর ১২ নম্বর থাকে, রিকশা দিয়া যাইতে যাইতে যাইতে রিকশাওয়ালাও ক্লান্ত হইয়া গেছিল। রাস্তায় একবার রেস্টও নিছি আমরা। তারপর যাইয়া যখন পৌঁছাইলাম, ওরা আমার গান না শুইনা আগে আমারে পঞ্চাশ টাকার স্ট্যাম্পে সাইন করতে কইল যাতে ব্যান্ড হিট করলে আমি ভাইগা না যাই। আমি তো ডরে শ্যাষ, ব্যস, ওই একদিনই গেছিলাম, আর যাই নাই। (চলবে-০২)
লেখক: কলামিস্ট ও সঙ্গীতশিল্পী
সম্পাদনা: আশিক রহমান