সুন্নাহ বলতে কী বুঝায়?
া মাহমুদুর হাসান
‘সুন্নাহ’ এর শাব্দিক অর্থ হলো, পথ বা জীবনাদর্শ, তা উৎকৃষ্ট হোক বা নিকৃষ্ট। ইসলামী আকীদাপন্থীদের পরিভাষায় সুন্নাহ অর্থ হলো, রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ যে জীবনাদর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করেছেন সে জীবনাদর্শকে সুন্নাহ বলা হয়। এটা এমন এক আদর্শ, যা অনুসরণ করা ওয়াজিব। এ সুন্নাতের অনুসারীদের প্রশংসা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে এর বিরোধীদের নিন্দা করা হয়েছে। এজন্যই বলা হয় অমুক ব্যক্তি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসারী। অর্থাৎ সে সুদৃঢ় ও প্রশংসিত আদর্শের অনুসারী। হাফেয ইবনে রজব (রহ.) বলেন, সুন্নাত হলো প্রচলিত পদ্ধতি, যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের বিশ্বাস, আমল ও বক্তব্যসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে। এটাই হলো প্রকৃত সুন্নাত। (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ১/১২০)
সার্বিকভাবে সুন্নাতের অর্থ হলো, বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সকল ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) এর হাদীস, মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণের আদর্শের অনুসরণ করা। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া সুন্নত: দিনের ক্লান্তিকর চলাফেরার পর রাতের ঘুম শরীরের প্রশান্তি শরীর সুস্থ থাকাকে সাহায্য করে। শরীরের বর্ধন এবং কর্ম চাঞ্চল্যতেও সাহায্য করে ঘুম। মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে যা কিছু অতি জরুরি ঘুম তার অন্যতম। মুমিন বান্দা যদি ঘুমের মাধ্যমে দেহ ও মনকে আরাম দেওয়ার নিয়ত করে, যাতে করে সে আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের বিষয়ে আরো দৃঢ় হতে পারে। সেই ঘুম যদি সুন্নত ও শরয়ী আদব পরিপূর্ণ রূপে পালন করা হয়, তবে জীবনের প্রয়োজনীয় ঘুমও ইবাদত হিসাবে পরিগণিত হবে এবং সে পুণ্য লাভ করবে । সাহাবী মুআয ইবন জাবাল (রা.) বলতেন¯আর আমি (রাতে) ঘুমাই এবং জাগ্রত হয়ে সালাত আদায় করি, জাগ্রত থেকে সালাত আদায়ের মাধ্যমে যে ভাবে ছাওয়াবের আশা করি ঠিক তেমনি করে ঘুমানোর মাধ্যমেও ছাওয়াবের আশা করি। (বুখারি, হাদিস ৩৯৯৮)
ইবনে হাজার (রহ.) বলেন এর অর্থ হলো, তিনি আরামের ভিতর পুণ্য আশা করতেন যেমন কষ্টের ভিতর আশা করতেন। কেননা, আরামের উদ্দেশ্য যদি ইবাদত করার জন্য সাহায্য সঞ্চয় করা হয়, তবে সে আরামের দ্বারা পুণ্য হবে। এখানে মুআয ইবনে জাবাল (রা.) -এর জাগ্রত হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রাতের নামায। রাসুল (সা.) তার উম্মতে ঘুমের সেই বিধিগুলোও শিখিয়ে গেছেন, যার দ্বারা মানুষের প্রয়োজনীয় ঘুম ইবাদতে পরিণত হতে পারে । আসুন জেনে নিই সেই সুন্নত বিধিগুলো কী কী ।
অধিক রাত না জেগে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া সুন্নত। রসুল (সা.) এশার নামাযের পূর্বে ঘুমানো এবং নামাযের পর অহেতুক গল্প-গুজব করাকে খুব অপছন্দ করতেন। (বুখারি, হাদিস ৫১৪)
তবে ভালো ও নেক কাজের জন্য এশার পরে জাগ্রত থাকাতে কোনো ক্ষতি নেই। যেমন মেহমানের সাথে কথা বলা অথবা ইলমি আলোচনা করা অথবা পরিবারকে সময় দেওয়া ইত্যাদি। তাছাড়া তাড়াতাড়ি ঘুমানোর আরও কিছু উপরকারিতা রয়েছে । প্রথমত: সুন্নাত অনুসরণের অভ্যাস হয় । দ্বিতীয়ত: শরীরকে আরাম দেওয়া যায়। কেননা দিনের ঘুম রাত্রের ঘুমের ঘাটতি পূরণ করতে পারে না। তৃতীয়ত: ফজরের নামাযের জন্য খুব সহজে এবং পূর্ণ শক্তি ও চাঞ্চল্যতার সাথে জাগ্রত হওয়া যায়। চতুর্থত: তাহাজ্জুদের নামাযের জন্য শেষ রাতে জাগ্রত হতে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য এটি বড় সহায়ক।