সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কুরআনের বর্ণনা
া জাকারিয়া হারুন
ইসলাম শান্তির ধর্ম। সাম্য-মৈত্রী ইসলামের ভূষণ। ভ্রাতৃত্ব ইসলামের অন্যতম দীক্ষা। মুসলমানদের মানবহিতৈষী মনোভাব দেখে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে অগণিত অমুসলিম। আর আজ ইসলামের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসবাদের আঙুল তোলা হচ্ছে। মূলত, ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য ষড়যন্ত্রের কারণেই এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থান।
তারা ইসলামকে কলঙ্কিত করতে, সত্যিকার ইসলামপন্থি, ইসলাম প্রচারক ও ইসলামি আন্দোলনকারীদের বিতর্কিত করতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করছে। অন্যদিকে ইসলামি দেশগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নতির পথ রোধ করতে এবং এসব দেশে তাদের সামরিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে একে কাজে লাগাচ্ছে।
তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কিছু বিভ্রান্ত মুসলিমকে বেছে নিয়েছে। পাশ্চাত্য ষড়যন্ত্রের কারণে হোক কিংবা অন্য কোন কারণে হোক যারাই এই পথে পা বাড়িয়েছে তারা জঘন্যতম অপরাধে জড়িত হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা। ১. হত্যাকারীর স্থান হবে জাহান্নামে : হত্যাকারীর স্থান হবে জাহান্নামে উল্লেখ করে কুরআনে বলা হয়েছে, “কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে।’’ [সূরা নিসা : ৯৩]
২. অন্যায়ভাবে হত্যাকারী বিশ্বের সবাইকে হত্যাকারী হিসেবে আল্লাহর কাছে চিহ্নিত : কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, ‘‘নরহত্যা অথবা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করা ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল।’’ [সূরা মায়িদা : ৩২] ৩. অশান্তি সৃষ্টি করতে বারণ : কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, ‘‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তাতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।’’ [সূরা আরাফ : ৫৬]
৪. সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীর ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত : কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, ‘‘যারা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের জন্য রয়েছে লা’নত এবং মন্দ আবাস।’’ [সূরা রা’দ : ২৫] ৫. সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ হত্যা অপেক্ষা গুরুতর : কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, ‘‘ফিতনা (অর্থ : প্রলোভন, দাঙ্গা, বিশৃঙ্খলা, যুদ্ধ, শিরক, ধর্মীয় নির্যাতন ইত্যাদি) হত্যা অপেক্ষা গুরুতর।’’ [সূরা বাকারা : ১৯১]
৬. প্রত্যেক মুসলিম এর প্রতি অন্য ভাই এর রক্ত, মাল ও সম্মানকে ক্ষুণœ করা হারাম করা হয়েছে : আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের কোন ভাই যাতে করে অন্য মুসলিম ভাইকে ছোট না করে অর্থাৎ তার মান ও সম্মান ক্ষুণœ না করে। কেননা প্রত্যেক মুসলিম এর প্রতি অন্য ভাই এর রক্ত, মাল ও সম্মানকে ক্ষুণœ করা হারাম করা হয়েছে। (রক্ত দ্বারা উদ্দেশ্য হত্যা করা।” [সহীহ মুসলিম-৪/১৯৮৬, হাদীস-২৫৬৪]
৭. কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হত্যা সম্পর্কিত মোকদ্দমার ফায়সালা হবে : “কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফায়সালা হবে তা হলো, রক্তপাত বা হত্যা সম্পর্কিত।” [বুখারি : ৬৩৫৭]
৮. কবিরা গোনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোনাহ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কবিরা গোনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।” [বুখারি : ৬৮৭১, মুসলিম : ৮৮]
৯. হত্যাকৃত ব্যক্তি কিয়ামতের দিবসে হত্যাকারী সম্পর্কে বলবে ‘হে প্রভু সে আমাকে হত্যা করেছে : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হত্যাকৃত ব্যক্তি কিয়ামতের দিবসে হত্যাকারীর মাথার অগ্রভাগ নিজ হাতে ধরে এমনভাবে নিয়ে আসবে যে হত্যাকারীর গলার রগসমূহ থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। তখন হত্যাকৃত ব্যক্তি এ কথা বলতে বলতে হত্যাকারীকে আরশের কাছে নিয়ে আসবে ‘হে প্রভু সে আমাকে হত্যা করেছে।” [মুসনাদে আহমদ : ২৫৫১, তিরমিজি : ২৯৫৫]
১০. জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে, এ ধরনের কোন কর্ম, আচরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। হযরত জাবের (রা.) বলেন রাসূল (সা.) কারো হাতে খাপমুক্ত তরবারি বের করতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ, তিরমিযী)
১১. আরেক হাদীসে কারো প্রতি অস্ত্র দ্বারা ইশারা করে কথা বলতেও নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দ্বারা ইশারা না করে কারণ শয়তান তখন তার হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নেবে এবং সে জাহান্নামের গর্তে পতিত হবে, তা সে অনূভব করতে পারবেন, (বুখারী, মুসলিম) ১২. অন্যত্র বলা হয়েছে কোন মুসলমানের জন্য জায়েজ নয় আরেকজন মুসলমানকে ভয় দেখানো (মেশকাত) উন্মুক্ত তরবারী বা অন্য কোন অস্ত্র দেখলে মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হতে পারে ইসলাম এটাও বরদাশত করে না। সন্ত্রাসবাদ আর জঙ্গিবাদতো দূরের কথা ইসলাম মানব প্রাণকে এতটাই গুরুত্ব দেয়, যে একজনের প্রাণ হরণ গোটা মানবজাতির প্রাণ হরণের নামান্তর বলে ঘোষণা দিয়েছে, ইরশাদ করেছে, নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্য ছাড়া কেউ অন্য কাউকে হত্যা করলো সে যেন গোটা মানব জাতিকেই হত্যা করল। আর কেউ অন্য কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সকল মানুষেরই প্রাণ রক্ষা করল। (সূরা মায়িদা-৩২)
বিভিন্ন মুসলিম দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের যে উত্থান ও তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়, তার সাথে শুধু গুটিকতেক মুসলিম জড়িত! বিশ্বের বরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদগণ এবং মূলধারার সকল ইসলামী সংগঠন ও সংস্থা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, এধরনের ব্যক্তিরা বিভ্রান্ত, বিপথগামী।
এ সকল ব্যক্তি কোনভাবেই ইসলামের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। তারা ইসলামকে বিশ্ববাসীর সামনে বিকৃত ও কুৎসিতভাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়। ইসলামের নামে যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- অনৈসলামিক ও অনৈতিক। ইসলাম সর্বদা মানুষে মানুষে হৃদ্যতা ও সৌহার্দ্য স্থাপনের মাধ্যমে শান্তি ও সমৃদ্ধির পৃথিবী গড়ার তাকিদ দেয়। লেখক : প্রবন্ধিক গল্পকার