সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত, এলাকায় গণসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ বিএনপির কাছে মূল্যায়ন চায় শরিক দলগুলো
২০ দলীয় জোটের নির্বাচন ভাবনা
শাহানুজ্জামান টিটু : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এজন্য দলগুলো সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে। ওই তালিকানুযায়ী শরিক দলগুলো বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা করবে। শরিক দলগুলোর কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সময়ের পরীক্ষায় ২০ দলীয় জোটের শরিকরা উত্তীর্ণ। কারণ সরকারের নানা জুলুম-নির্যাতন, হামলা-মামলা, হুমকি-ধমকি, বিভিন্ন ধরনের লোভ-লালসা উপেক্ষা করে তারা এখনো জোটে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। তাই তারা মনে করেন জোটের নেতৃত্বদানকারী বিএনপি তাদেরকে মূল্যায়ন করবে। জোটের নেতারা আরও বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শত চেষ্টা করেও কেউ জোট থেকে বের হয়ে যায়নি বরং জোট আরও শক্তিশালী হয়েছে ।
জোট নেতারা জানান, বিএনপির প্রার্থী অনেক। কিন্তু জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হলে শরিকদের আসন ছেড়ে দিতেই হবে। সেক্ষেত্রে মাঠে প্রার্থীর অবস্থান কেমন সেটা বিবেচনা করেই দরকষাকষি হবে। সেজন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ বাড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন জোট নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক জানান, শরিকদের বিষয়ে বিএনপি সহনশীল থাকবে। পাশাপাশি আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে নিবন্ধনকৃত দলগুলো অগ্রাধিকার পাবে। যারা নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নয় এসব দলগুলো বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। সময় এলে তখন জোটের শরিকদলগুলোর প্রতীক বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
শরিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা
জামায়াতে ইসলামী : ২০ দলীয় জোটের অন্যতম এই দলের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিবে।
৪৩টি আসনে তাদের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। তারা হলেন, মো. ইজ্জতউল্লাহ (সাতক্ষীরা-১), আবদুল খালেক ম-ল (সাতক্ষীরা-২), মুফতি রবিউল বাশার (সাতক্ষীরা-৩), গাজী নজরুল ইসলাম (সাতক্ষীরা-৪), ছমিরউদ্দিন (মেহেরপুর-১), মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (চুয়াডাঙ্গা-২), মতিয়ার রহমান (ঝিনাইদহ-৩), আজিজুর রহমান (যশোর-১), আবু সাইদ মুহাম্মদ সাদাত হোসাইন (যশোর-২), অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ (বাগেরহাট-৩), শহীদুল ইসলাম (বাগেরহাট-৪), মিয়া গোলাম পরওয়ার (খুলনা-৫), শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুছ (খুলনা-৬), এম এ হাকিম (ঠাকুরগাঁও-২), মোহাম্মদ হানিফ (দিনাজপুর-১), আনোয়ারুল ইসলাম (দিনাজপুর-৬), মনিরুজ্জামান মন্টু (নীলফামারী-২), আজিজুল ইসলাম (নীলফামারী-৩), হাবিবুর রহমান (লালমনিরহাট-১), শাহ হাফিজুর রহমান (রংপুর-৫), নূর আলম মুকুল (কুড়িগ্রাম-৪), আবদুল আজিজ (গাইবান্ধা-১), নজরুল ইসলাম (গাইবান্ধা-৩), আবদুর রহিম সরকার (গাইবান্ধা-৪), নুরুল ইসলাম বুলবুল (চাঁপাই নবাবগঞ্জ-২), মো. লতিফুর রহমান (চাঁপাই নবাবগঞ্জ-৩), আতাউর রহমান (রাজশাহী-৩), রফিকুল ইসলাম খান (সিরাজগঞ্জ-৪), আলী আলম (সিরাজগঞ্জ-৫), মতিউর রহমান নিজামীর পরিবারের কোনো সদস্য (পাবনা-১), মাওলানা আবদুস সোবহান (পাবনা-৫), দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দুই ছেলে (পিরোজপুর-১ ও ২), শফিকুল ইসলাম মাসুদ (পটুয়াখালী-২), মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ছেলে (শেরপুর-১), অধ্যাপক জসিমউদ্দিন (ময়মনসিংহ-৬), ফরীদউদ্দিন (সিলেট-৫), মাওলানা হাবিবুর রহমান (সিলেট-৬), ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের (কুমিল্লা-১১), শামসুল ইসলাম (চট্টগ্রাম-১৪), হামিদুর রহমান আযাদ (কক্সবাজার-২) ও শাহজালাল চৌধুরী (কক্সবাজার-৪)। এ আসনগুলোর মধ্যে চাঁপাই নবাবগঞ্জ-২, সিরাজগঞ্জ-৫, ময়মনসিংহ-৬, সাতক্ষীরা-১, পটুয়াখালী-২, কক্সবাজার-৪ এই ৬টি আসনে জামায়াত নতুন করে লড়তে যাচ্ছে। গত নির্বাচনে এ আসনগুলোতে জামায়াতের প্রার্থী ছিল না। তবে ময়মনসিংহ-৬ আসনে ২০০১ সালে জামায়াত প্রার্থী জোটের মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন। সিরাজগঞ্জ-৫ ও কক্সবাজার-৪ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান। এ কারণেই আসন দুটিতে ছাড় দিতে নারাজ তারা।
এলডিপি
দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম জানান, দলের ২ ডজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কর্নেল অলি (চট্টগ্রাম-১৩), ড. রেদোয়ান (কুমিল্লা-৭), শাহাদাৎ হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১), আব্দুল করিম আব্বাসী (নেত্রকোনা-১), আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান (জয়পুরহাট-২), আব্দুল গনি (মেহেরপুর-২), প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (চাঁদপুর-৩), নরুল আলম (চট্টগ্রাম-৭), এম ইয়াকুব আলি (চট্টগ্রাম-১১), অ্যাড. কফিল উদ্দিন চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৫)। তিনি জানান, এরা প্রত্যেকেই একাধিকবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছেন। এছাড়াও কিছু সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছে।
জাতীয় পার্টি (জাফর)
পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন জানিয়েছেন, আমাদের দলে সাবেক এমপি রয়েছেন ১৭ জন। এরা সবাই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। আর সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, জাফরউল্লাহ খান চৌধুরী (কুষ্টিয়া-৩), এস এম এম আলম (চাঁদপুর), খালেকুজ্জামান চৌধুরী (ঢাকা-ডেমরা), শফিউদ্দিন ভূঁইয়া (সোনারগাঁও নারায়ণগঞ্জ), অ্যাডভোকেট মাওলানা রুহুল আমিন (পিরোজপুর) প্রার্থী হতে কাজ করে যাচ্ছেন। ড. টিআইএম ফজলে রাব্বি (গাইবান্ধা-৩), মোস্তফা জামাল হায়দার (পিরোজপুর-১), আহসান হাবিব লিংকন (কুষ্টিয়া-২), এছাড়া নবাব আলি আব্বাস খান (মৌলভী বাজার কুলাউড়া), সেলিম মাস্টার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মজিবুর রহমান (মুন্সিগঞ্জ), নাসের চৌধুরী (চট্টগ্রাম), সাবেক এমপি গোলাম মোস্তাফা বাটুল (রংপুর), সাইদুর রহমান মানিক (ময়মনসিংহ)।
বিজেপি
দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ (ভোলা-১), ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মতিন সাউদ (ঢাকা-৫)। আব্দুল মতিন সাউদ জানান, এছাড়াও খুলনা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও নারায়ণগঞ্জে দলের যোগ্য প্রার্থী রয়েছে।
কল্যাণ পার্টি
পার্টি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক (চট্টগ্রাম-৪), কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম.এম. আমিনুর রহমান (পাবনা-১), অ্যাডভোকেট আজাদ মাহবুব (পিরোজপুর সদর), মো. ইলিয়াস (চট্টগ্রাম-৮ বাকুলিয়া), ইসমাইল ফারুক চৌধুরী (কক্সবাজার সদর), অ্যাডভোকেট আজাদ মাহবুব (পিরোজপুর সদর), পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. ইকবাল হাসান (নারায়ণগঞ্জ-২), আলহাজ শাহাজাদা আলম (চট্টগ্রাম-১১ পতেঙ্গা)। ইসমাইল ফারুক চৌধুরী (কক্সবাজার সদর), আলী হোসাইন ফরায়েজি (কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম)।
বাংলাদেশ ন্যাপ
সম্ভাব্য প্রার্থী চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি (নীলফামারী-১), এম. গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া (নরসিংদী-২), আলহাজ গোলাম সারওয়ার খান (মৌলভীবাজার-২), সাদ্দাম হোসেন (কুমিল্লা-১০), সৈয়দ শাহজাহান সাজু (কুমিল্লা-৭), ব্যারিস্টার মশিউর রহমান গানি (রংপুর-৩), মো. শহীদুন নবী ডাবলু (পিরোজপুর-১), মো. কামাল ভুইয়া (নারায়ণগঞ্জ-৪), মো. নুরুল আমান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১১), মো. তারিকুল ইসলাম (পাবনা-২)।
খেলাফত মজলিশ
খেলাফত মজলিশ-এর আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মুহম্মদ ইসহাক জানান, তিনি নিজে (পাবনাÑ১), মহাসচিব ড. আহমেদ আবদুল কাদের (হবিগঞ্জ-৪) আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে চান। এছাড়া সারাদেশের যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
দলের নির্বাহী সভাপতি মুফতি মুহম্মদ ওয়াক্কাস (যশোর-৫) থেকে ২০০১ সালে জোটের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারো তিনি একই আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মহীউদ্দিন ইকরাম, মুফতি রেজাউল করিম, আব্দুর রব ইউসুফি দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জাগপা
জাগপার চেয়ারম্যান শফিউল আলম প্রধানের মৃত্যুর কারণে দিনাজপুর-২ আসনে এবার তার সহধর্মিনী অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া দলের মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমান (বগুড়া-১) থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এনপিপি
ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল-২), মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা (ঢাকা-১৩), এম ওয়াহিদুর রহমান (কুমিল্লা-১০) থেকে নির্বাচন করতে চান।
এনডিপি
খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা (পাবনা-২), মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা (খুলনা-৩) আসনে নির্বাচন করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল’র এএইচএম কামরুজ্জামান খান (কিশোরগঞ্জ-৫), অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১) আসনে নির্বাচন করতে চান।
ইসলামী ঐক্যজোট
চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রাকিব ও মহাসচিব মাওলানা আবদুল করিম নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। আব্দুল করিম জানিয়েছেন সারাদেশে ১০টি আসনে তাদের যোগ্য প্রার্থী রয়েছে।
ডেমোক্রেটিক লীগ
ডিএল সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি (ময়মনসিংহ-৮) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী। সাম্যবাদী দলের কমরেড সাঈদ নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
লেবার পার্টি
পা?র্টির জাতীয় নির্বাহী ক?মি?টি দলীয়ভা?বে ৩০ আস?নে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। দলটি ২০ দলীয় জো?টের কা?ছে ৩টি আসন চায়। দলের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান পিরোজপুর-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে আশাবাদী। কিন্তু তিনি জানান, পার্টির সিদ্ধান্ত হয়েছে তাকে ঢাকা-১৫ মিরপুর (আং?শিক কাফরুল) সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কাজ করার জন্য। এছাড়া দলের সম্ভাব্য প্রার্থী সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ উদ্দিন