বেড়েছে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব : দায়ী কে?
ডা. জাকির হোসেন
নগরবাসীর বহু ভোগান্তির মধ্যে নতুন যে ভোগান্তি শুরু হয়েছে তা হলোÑ প্রতি ঘরে ঘরে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব। একের পর এক ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না রাজধানীবাসীর। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের তাপমাত্রা সাধারণত অন্যান্য জ্বরের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। তাপমাত্রা বেশিরভাগ সময়ই ১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে যায়। একই সঙ্গে প্রচ- মাথাব্যথা, সারা শরীরে ব্যথা, হাত ও পায়ের জোড়ায় জোড়ায় এবং গিরায় প্রচ- ব্যথার কারণে রোগীরা অস্থির হয়ে যায়। যে সকল অল্প বয়সী শিশুরা আক্রান্ত হয় তারা ব্যথার কথা মুখে বলতে পারে না বিধায় অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে। যে সকল শিশুরা হাঁটতে সক্ষম তারা ব্যথার কারণে সাধারণত হাঁটতে চায় না। রোগীর মাংসপেশী এমনকি পায়ের তলায়ও থাকে তীব্র ব্যথা। তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে খাওয়ার রুচি থাকে না একেবারেই।
অনেক রোগী কয়েক মিনিট পরপর বমি করতে করতে পানিশূন্য হয়ে যায়। শিশুদের এই পানিশূন্যতা বেশি দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস প্রজাতির মশা। সাধারণত এই এডিস মশাই এই চিকুনগুনিয়ার জন্যও দায়ী। এডিস ইজিপ্টি এবং এডিস এলবোপিকটাস এই দুই প্রজাতির মশা থেকেই চিকুনগুনিয়া রোগের সংক্রমণ ঘটে। আমাদের দেশে সবাই স্বাস্থ্য নিয়ে কথাবার্তা বলে, কিন্তু স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে কথা বলার লোক থাকলে, কিংবা নীতি নির্ধারক পর্যায়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা করা লোক থাকলে এই রোগ মহামারি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। যখন ডেঙ্গু মহামারি হয়। ঠিক তখনই থেকে এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যেত। মানুষকে এই সচেতনতার কাযক্রর্মে অংশগ্রহণ করানো যেত। মিডিয়ায় প্রচার চালিয়ে ডেঙ্গুর মতো আরেকটি রোগ আসার পূর্বাভাস দিয়ে আগেই মানুষকে জানানো যেত। বৃষ্টির মৌসুমে সাধারণত রাজধানীতে মশার প্রাদুর্ভাব সবসময়ই বেশি থাকে। কারণ বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা স্বাধীনতার এত বছর পরও নগরবাসীকে উপহার দেওয়া সম্ভব হয়নি।
এই জমাট বাঁধা পানিতে মশা বংশবৃদ্ধি করছে। এই বছর রাজধানীতে কয়েকদিন বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হওয়ার ফলে একদিকে এডিস প্রজাতির মশাগুলোর জন্ম ও বিস্তার ঘটেছে, অন্যদিকে এসব মশার কামড়ে প্রতিদিন চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শত শত মানুষ। শিশু কিংবা বৃদ্ধ কেউই রেহাই পাচ্ছে না। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো প্রথমদিকে সিটি করপোরেশন ও সরকারের পক্ষ থেকে চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে যথাযথ প্রচারণা একেবারেই ছিল না। দুই সিটি করপোরেশনের তাদের দায়িত্ব ও ভূমিকার বিষয়টি একেবারেই এড়াতে পারেন না। দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশা নিধনের জন্য কোটি কোটি টাকার অংক বরাদ্দ বাড়ানো হলেও তার ফলাফল নিয়ে আজ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে।
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট/সম্পাদনা: আশিক রহমান