ফরহাদ মজহারকেই সব পরিষ্কার করতে হবে
শাহরিয়ার কবীর
ফরহাদ মজহার বলেছেন, তাকে অপহরণ করা হয়েছে গেট থেকে বেরোনোর পরপর এবং অপহরণ অবস্থাতে তিনি কয়েকবার বাড়িতে ফোন করেছেন। তার নিজের মোবাইল টেলিফোনে। কিন্তু অপহরণকারীরা তাকে যখন ছেড়ে দিল তারপর তিনি একবারও বাড়িতে ফোন করার প্রয়োজন মনে করলেন না? কেন ফোন করে বললেন না, তোমরা ভেব না, আমি ঠিক আছি। আমাকে অপহরণকারীরা ছেড়ে দিয়েছে। আমি বাড়ি ফিরছি বা বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করো। আমি অমুক জায়গা আছি। একবারও তিনি কিন্তু জানাবার প্রয়োজন মনে করেননি। মোবাইল ফোন তো ছিলই তার সঙ্গে। অপহরণের পরে প্রথম কাজটা হচ্ছে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে যাওয়া। যেটা আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি। কয়েকবারই তো আমাকে অপহরণের চেষ্টা হয়েছে এবং অপহরণের সময় আমি চিৎকার করেছি, পুলিশের কাছে ছুটে গিয়েছি। বুঝলাম তিনি চিৎকার করেননি, হয়তো তার সাহস হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে ৩৫ লাখ টাকার জন্য কি কেউ তাকে অহরণ করবে, অপহরণকারীরা এত কাঁচা কাজ করবে? তারা কি জানে না, কাকে অপহরণ করছে? এবং হজম করা যাবে কিনা? ফরহাদ মজহারের মতো এত পরিচিত একটা চেহারা। সাধারণত অপহরণের শিকার হন বড়লোকের ছেলে বা ব্যবসায়ীরা, টাকাপয়সা নিয়ে মুখ বন্ধ করে চোখ বেঁধে রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে আসে। এ রকম ব্যাপক পরিচিত কাউকে সাধারণ অপহরণ করা হয় না। এ রকম আমরা অনেক দেখেছি।
ফরহাদ মজহার কোনোরকম টর্চারের শিকার হয়েছেন, এমনটি কিন্তু এখনো তিনি বলেননি। কেনই বা তাকে ছেড়ে দিল টাকা না নিয়ে, এ বিষয়েও কিছু বলেননি। কিন্তু তিনি বলেছেন, সরকারকে বিব্রত করার জন্য কেউ তাকে অপহরণ করে থাকতে পারে। সরকারকে রক্ষার জন্য তার এত ব্যকুলতা আমরা সেটা জানতাম না। আরা জানি, বর্তমান সরকারের প্রতি তার বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই। এই অপহরণ ঘটনায় সরকার বিব্রত হয়েছে। ফরহাদ মজহার যদি ফিরে না আসতেন স্বাভাবিকভাবেই সরকারকে বিব্রত হতে হতো। তার হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার পর গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেছিলাম, অলিম্বে ফরহাদ মজহারকে খুঁজে বের করতে হবে এবং এই অপহরণ আমরা কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারি না।
কথামালার একটা গল্পে আছে না, ওই যে রাখাল বালক সবসময় বলতÑ বাঘ আসছে, বাঘ আসছে। সে তা বলত আর ঠাট্টা করত। এরপর যদি এমনটি সত্যিই ঘটে, তিনি অপহরণ হন তাহলে লোকজন তা ঠাট্টা বলে ধরে নেবে। আমরা এটাকে মোটেও ঠাট্টার ব্যাপার বলে মনে করি না। আমি মনে করি, ফরহাদ মজহারের উচিত হবে নিজেকে প্রকাশ করা এবং এ ব্যাপারে যে তদন্ত হচ্ছে সেখানে সহযোগিতা করা। কারা এটা করেছে আমরা জানি না। যদি অপহরণের ঘটনা হয়ে থাকে তাহলে আমাদের জানতেই হবে। রাষ্ট্র, নাকি রাষ্ট্র বহির্ভূত শক্তি এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমাদের জানতে হবে। ফরহাদ মজহারের বক্তব্যে রাষ্ট্রকে দোষী করা হয়নি বরং তিনি বলেছেন, সরকারকে বিতর্কিত করার জন্য এটা করা হয়েছে। তাহলে কি রাষ্ট্র বহিঃর্ভূত কোন শক্তি এটা করতে পারে? জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, সহানুভূতি তো তার। ফরহাদ মজহারকে সবটা পরিষ্কার করতে হবে। আমরা এই সচ্ছতাটা তার কাছ থেকে আশা করি। তার তো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তার মতো মানুষ ভয় পাবে কেন?
পরিচিতি: ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি
মতামতগ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান