কোন দিকে যাচ্ছে দেশ?
এ্যাড. তৈমূর আলম খন্দকার
সাংবিধানিক নিয়মে আগামী ২০১৮ সাল হবে নির্বাচনি (জাতীয় নির্বাচন) বছর। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশের বিগত নির্বাচনি বাস্তব অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। হোন্ডা, গুন্ডা, আর অর্থের প্রভাবে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন বিগত নির্বাচনগুলোতে না হওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উঠে; আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলাম এবং বামদের যুগপৎ আন্দোলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করে।
১/১১ সরকার গঠিত হওয়ার পর তারা জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার পরিবর্তে দেশকে রাজনীতি শূন্য করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়ে রাজনীতিবিদদের (দুই নেত্রীসহ) জেলখানায় অবরুদ্ধ রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন দিয়ে সিরিজ মামলায় জড়িত করে। ২০০৪ সনের কমিশন আইনের ৩নং ধারা অনুযায়ী দুদক একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন হলেও মে. জে. (অব.) আ. মতিন এবং মে. জে. মাসুদ উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত টাক্স ফোর্স দুদককে নিয়ন্ত্রণ করত। এই টাক্স ফোর্সের মাধ্যমে উচ্চাভিলাষী সেনা কর্মকর্তারা ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ‘দুর্নীতিবাজ’ শিরোনামে ২২২ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করে। এর মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনাসহ উভয় দলের রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি খ্যাতনামা ব্যবসায়ীদের নাম ছিল। কিন্তু মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের ‘দুর্নীতিবাজ’ তালিকা থেকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র রাজনীতিবিদদের আটক রেখে বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে উচ্চাভিলাষী গোয়েন্দা সেনা অফিসারদের সমর্থনে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয় যা কওঘএ চঅজঞণ নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। ড. ইউনূস, ড. ফেরদৌস আহাম্মদ কোরেশীসহ আওয়ামী ও বিএনপির অনেক এমপি/মন্ত্রী কওঘএ চঅজঞণ-কে সংগঠিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগে টাক্স ফোর্স তথা দুদকের মামলা থেকে বেঁচে যায়। মামলা থেকে বাঁচাই ছিল তখন প্রধান টার্গেট, পাশাপাশি কওঘএ চঅজঞণ-এর বদৌলতে পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়া। কিন্তু বাধ আসে জনগণ ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী। যারা সেনা সমর্থিত সরকারকে সমর্থন করেছিল তাদেরকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নাম দিয়েছিল ‘সংস্কারবাদী’। এই সংস্কারবাদীদের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা পছন্দ করেনি, ফলে কওঘএ চঅজঞণ গঠনের পক্রিয়া ঝখঙড গঙঞওঙঘ এ থেমে যায়। বর্তমানে সেই সংস্কারবাদীরা স্ব-স্ব অবস্থান ও মর্যাদা নিজ নিজ রাজনৈতিক দলে ফিরে পেয়েছে। কিন্তু টাক্স ফোর্সের রিমান্ড ও দীর্ঘদিন যারা কারারুদ্ধ ছিল (যেমন অত্র লেখক বারবার রিমান্ডসহ ২৬ মাস কারারুদ্ধ ছিল) তাদের কষ্টের দাগ মন থেকে মুছে যায়নি।
সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘একক আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিনশত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের (৩) দফার কার্যকর তাকালে উক্ত দফায় বর্ণিত সদস্যদিগকে লইয়া সংসদ গঠিত হইবে; সদস্যগণ সংসদ সদস্য বলিয়া অভিহিত হইবেন।’ ‘প্রত্যক্ষ নির্বাচন’ সংবিধানে থাকলে বাস্তবে জনগণ এ দেখা পায় না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে প্রার্থী ভোটার দেখেনি, ভোটারাও প্রার্থী দেখেনি, যা ছিল প্রত্যক্ষ নির্বাচন নয় বরং স্বপ্নের নির্বাচন। মূলত নির্বাচন হয়েছিল নির্বাসন।
আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে এখন ‘খেই’ হারিয়ে ফেলেছে। তাদের ক্ষমতায় যেতেই হবে এ মনবাসনায় বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার মানসে তারা এখন মাঠে এবং তাদের বক্তৃতায় এসব বক্তব্যই বেরিয়ে আসছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত অফিসে পুলিশি তল্লাশি এবং ১৮/৬/২০১৭ (পবিত্র রমজান মাসে) ত্রাণ বিতরণে যাওয়ার সময় বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলা আওয়ামী লীগের ‘খেই’ হারিয়ে ফেলারই বহিঃপ্রকাশ; যার গন্তব্যস্থল জাতীয় বিপর্যয় অর্থাৎ আরেকটি ১/১১ সেনা সমর্থিত সরকার নতুবা জাতীয় নির্বাচনের পরিবর্তে একটি অনাকাক্সিক্ষত ‘গৃহযুদ্ধ’ (!)?
লেখক: কলামিস্ট ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সম্পাদনা: আশিক রহমান