যেসব কারণে মানুষ অবৈধভাবে বিদেশ যায়
রাজেকুজ্জামান রতন
অবৈধভাবে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একদল মানুষ কাজের সন্ধানে ছুটছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এখান থেকেই বোঝা যায়, আমাদের দেশের বেকার সমস্যার তীব্রতাটা কত বেশি। আমরা এই বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারছি না। একদিক দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, আরেকদিকে একদল মানুষ বিদেশে গিয়ে চাকরি করে আবার দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। একটা অদ্ভুত চক্রের মধ্যে আমরা পড়ে গেলাম।
শ্রমজীবী মানুষ দেশের বাইরে উৎপাদন করে দেশে অর্থ পাঠায় অথচ তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুব্যবস্থাটা নেই। তারা সম্মানজনক চাকরিতে নেই। মালয়েশিয়াতে মানুষ জঙ্গলে লুকিয়ে থাকছে, কখনো-বা থাইল্যান্ডের জঙ্গলে লুকিয়ে থাকছে। আবার কখনো কখনো গভীর অরণ্য, নদী পার হয়ে যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। এগুলোর কোনোটাই আমাদের দেশের জন্য সম্মানজনক পেশা নয়। আমি মনে করি, বেকার সমস্যা সমাধানে যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়ার কারণেই অভিবাসীদের সমস্যায় পড়তে দেখি। কখনো কখনো তারা অবৈধভাবেই বিদেশে যায় একটু ভালো থাকার জন্য। প্রিয় পরিবারটিকে ভালো রাখার জন্য। এখানে রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকের কর্মসংস্থান করতে পারত তাহলে হয়তো অবৈধভাবে কেউ বিদেশ যেতে আগ্রহী হতো না। এত দুর্ভোগও পোহাতে হতো না।
আমাদের জিডিপি বাড়ছে, কিন্তু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা বাড়ছে না। গত দুই বছরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে মাত্র ১৪ লাখ মানুষের। অথচ প্রতিবছর শ্রমবাজারে কাজ করতে আসে ২০-২২ লাখ মানুষ। এই বিপুলসংখ্যক যুবশক্তি আমাদের দেশের জন্য একটা সম্ভাবনা। আমরা বলি জনসংখ্যার সুবিধা, কর্মক্ষম যুবসমাজ একটা দেশের জন্য সম্পদ। কর্মক্ষম যুবসমাজ একটা দেশের সম্পদ না হলে সেটা বড় সঙ্কট হয়ে দাঁড়ায়। আমরা মনে করি, জিডিপির প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া অতি জরুরি। যারা বিভিন্ন দেশে বৈধভাবে আছে তাদের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বড় একটা অংশও আছে যারা অবৈধভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছে, তারা বৈধতা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। রাষ্ট্রের একটা উদ্যোগ নেওয়া উচিত তাদেরকে বৈধ চ্যানেলে বিভিন্ন দেশে পাঠানোর। ইউরোপের দেশগুলোতে শ্রমশক্তি দরকার অনেক। ইউরোপের অনেক দেশের জনসংখ্যা নিম্নমুখী। সেক্ষেত্রে তারা চাইছে অভিবাসী নিতে। এখানে আমাদের রাষ্ট্রের অন্তত সেই উদ্যোগটা নেওয়া উচিত, যাতে সেসব দেশে আমরা বৈধভাবে আমাদের কিছু বেকার পাঠাতে পারি।
পরিচিতি: কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাসদ
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন/সম্পাদনা: আশিক রহমান