গুলশান হামলার গ্রেনেড-অস্ত্র সরবরাহকারী সোহেলসহ গ্রেফতার ৩
বিপ্লব বিশ্বাস ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সাহাবুদ্দিন সনু ও মো. আসাদুল্লাহ : গুলশানের স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডার সোহেল মাহফুজকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গ্রেফতারের পর ঢাকায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কার্যালয়ে আনা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকাল ৪টার দিকে একটি জিপে তাকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। এর আগে, শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পুসকনি এলাকায় গোপন বৈঠক করার সময় সোহেল মাহফুজকে তিন সহযোগীসহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেনÑ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পার্বতীপুর গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে নব্য জেএমবির আইটি বিশেষজ্ঞ হাফিজুর রহমান হাফিজ ওরফে হাসান (২৮), একই উপজেলার বিশ্বনাথপুর কাটিয়াপড়ার এসলামের ছেলে জেএমবির সামরিক শাখার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য জুয়েল ওরফে ইসমাইল (২৬) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চরমোহনপুর মোড়ের ইয়াসিন আলীর ছেলে নব্য জেএমবির প্রধান সমন্বয়ক জামাল ওরফে মোস্তফা কামাল (৩৪)।
সিসিটিভির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, পুরনো জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাইয়ের আমলে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া এই ধুরন্ধর জঙ্গিকে দীর্ঘদিন ধরেই খুঁজছিল পুলিশ। গুলশান হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলো এই সোহেল মাহফুজই সরবরাহ করেছিলেন বলে তদন্তে জানতে পারে পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের মতে, গুলশান হামলার পরিকল্পনা ও এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, রাশেদ ও বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেটের বড় ধরনের ভূমিকা ছিল। তাই আলোচিত ওই মামলার তদন্তকাজ শেষ করতে হলে এই তিনজনকে গ্রেফতার করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে সোহেলকে গ্রেফতার সম্ভব হলেও এখনো বাকি রয়ে গেছেন রাশেদ ও বাশারুজ্জামান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) টিএম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, সোহেল মাহফুজ যেহেতু গুলশান হামলার সঙ্গে জড়িত তাই তাকে ঢাকায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে পাঠানো হয়েছে। বাকি তিনজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের একাধিক মামলার আসামি। তিনি আরো বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা জেলা পুলিশের সহযোগিতায় পুসকনি এলাকার একটি আমবাগানের মধ্যে টংঘরে গোপন বৈঠক করার সময় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। তার বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি সাদিপুর কাবলিপাড়া গ্রামে এবং তার পিতার নাম রেজাউল করিম। আর বাকি তিনজন চাঁপাইনবাবগঞ্জে একাধিক মামলার আসামি। তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে আদালতে নেওয়ার পথে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন সদ্য গ্রেফতার হওয়া এই জঙ্গি সোহেল মাহফুজ। পুরনো জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাইয়ের আমলে জঙ্গিবাদে জড়ান তিনি। পরে জেএমবির শীর্ষ ৬ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হলে সংগঠনটির আমির হন সাইদুর রহমান। ওই সময় জেএমবির শূরা (নীতি নির্ধারণী) কমিটির সদস্যপদ পায় মাহফুজ। ২০১০ সালের দিকে সাইদুর রহমান গ্রেফতার হয়। এরপর দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থেকে উত্তরাঞ্চলে জেএমবিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন মাহফুজ। নারায়ণগঞ্জে নিহত নব্য জেএমবির সমন্বয়ক ও গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তামিম আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল মাহফুজের। পরে তিনি নব্য জেএমবিতে যুক্ত হন। এরপর থেকে তিনি নব্য জেএমবির অস্ত্র কেনা, গ্রেনেড তৈরি এবং সরবরাহসহ আইটি শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গোয়েন্দা সূত্র আরো জানায়, বোমা তৈরি করতে গিয়ে সোহেল মাহফুজের ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে তিনি এক হাত দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে দক্ষ। ছাত্রজীবনে সোহেল মাহফুজ ইসলামি ছাত্রশিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী