ভর্তুকি একমাত্র ভরসা রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সরকারকে কঠোর হতে বললেন অর্থনীতিবিদরা
আরিফুর রহমান তুহিন : অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যখন লাভজনক অবস্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রমান্বয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের পরিধি বাড়াচ্ছে। বিনিয়োগ করছে নতুন প্রকল্পে। তখন সরকারের দেয়া সাবসিটি বা ভর্তুকিই এখন একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর।
একাধিক সূত্র জানায়, সরকারের এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে ভর্তুকি দিতে হয় না। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবছর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঋণের নামে সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিলেও পরবর্তীতে আর সেই অর্থ ফেরত দিচ্ছে না। ফলে সরকারকে উক্ত ঋণকে ভর্তুকি হিসেবে দেখাতে হচ্ছে। আর এর জন্য দুর্নীতি ও প্রশাসনের অদক্ষতাকে দায়ি মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে জনগণের টাকা এভাবে জলাঞ্জলি দেয়া এক প্রকার অন্যায়। এখনই সরকারের সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া দরকার বলে মনে করেন তারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, দেশে যে সকল রাষ্ট্রীয় মালীকানাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আছে তার প্রায় সবগুরো পরিচালিত হচ্ছে অদক্ষ এবং কিছু অসাধু ব্যক্তিদের দিয়ে। কিছু লোক সৎ ও নিষ্ঠাবান থাকলেও তারাও এখন অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। ফলে বছর শেষে আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হওয়ায় এগুলোকে সচল করতে সরকার ঋণের নামে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতির একটা নিয়ম আছে। যেগুলো কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলো যদি আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হয় তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই শর্তে ঋণ দেয়া যেতে পারে, হয় তারা ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে নাহয় সেখানে কর্মরতদের বরখাস্ত করে তদন্তের মাধ্যমে দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে তাদের প্রতিবছর ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। অথচ কখনোই তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বিআরটিসি বা বিমান বাংলাদেশের দিকে দেখুন, তারা প্রতিবছর লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে যেকোন বেসরকারি বাস সার্ভিস এসেই বছর ঘুরতে না ঘুরতে আরও নতুন বাস নামাচ্ছে। কয়েকটি বিমান কোম্পানি এতদিন দেশে সফলতার সাথে ব্যবসা করে এখন বিদেশের মাটিতে উড়ার পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে বিমানকে প্রতিবছর ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, হয় সরকারকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দিয়ে দেয়া উচিত, নাহয় এগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের মতে, ভর্তুকির নামে জনগণের টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এভাবে অর্থ দেয়া এক প্রকার জুলুম। সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের দায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এড়াতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংকে যে অনিয়ম হচ্ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক তা অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করেছিলো। কিন্তু তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কথায় কর্ণপাত করেননি। বেসিক ব্যাংক আজ ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন বেহাল অবস্থার জন্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্তারাও দায়ি বলে মনে করেন তিনি।
সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান লাভজনক অবস্থানে দাঁড়াতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময় লোকসানেই চলেছে। বাধ্য হয়ে সরকার কিছু প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে আদমজী জুট মিল ছিলো অন্যতম। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানকে বেসকারি খাতে দিয়ে দেয়া হয়েছে। এখনও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান সরকারি মালিকানায় রয়ে গেছে। এর বেশিরভাগই চলছে ভর্তুকি নির্ভর হয়ে। বাংলাদেশ বিমান, বিআরটিসি, বাংলদেশ রেলওয়েসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের লোকসান আকাশচুম্বি। মাঝে মাঝে কিছু প্রতিষ্ঠানের লোকসানের ব্যাপরে তদন্ত করা হলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। নিলেও তা তদন্ত পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এক প্রকার দায়হীনভাবেই কাজ করে যায়। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ