জনদরদী ও ন্যায়পরায়ণ রাষ্ট্রপ্রধান আল্লাহর আরশের ছায়ায় অবস্থান করিবেন
মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান
আজ যারা জনগণের নেতা দাবি করেন কিংবা জনগণের মুখে হাসি ফুটাতে রাষ্ট্র পরিচালনা কাজে এগিয়ে আসতে আগ্রহী তাদেরকে হজরত ওমর (রা.) এর রাষ্ট্র পরিচালনার আদর্শ সাহায্য করতে পারে। কারণ জনগণের মুখে হাসি ফুটাতে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন হযরত ওমর (রা.) এর নাম ইতিহাসের পাতায় অন্যতম।
হযরত ওমর (রা.) রাষ্ট্র পরিচালনার সময় জনগণের অবস্থা জানার জন্য ছদ্মবেশে একা একা বের হতেন। কে কোথায় অনাহারে অর্ধহারে আছে, কার কি প্রয়োজন তা খবর নিতেন। একবার প্রজাদের খবর নেওয়ার জন্য রাতে বের হলেন, কিছুদূর যাওয়ার পর একটি জীর্ণশীর্ণ ঘর দেখতে পেলেন, সেই ঘরের চুলাতে মিটি মিটি আগুন জ্বলছে। নিকটে যাওয়ার পর শুনতে পেলেন যে, ঘরের ভেতর থেকে রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এক মহিলা বলছে, ওমর রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন অথচ আমাদের মতো দরিদ্র জনগণের খবর তিনি রাখেন না। কতদিন যাবৎ আমার অবুঝ শিশুগুলো না খেয়ে আছে।
ক্ষুধার জ্বালায় আজ মৃত্যুর দরবারে উপনীত। ওমর (রা.) ঘরে গিয়ে বললেন, মা মতোমার বাচ্চারা কাঁদছে কেন? মহিলা বললেন, তাদের বাবা নেই আর আমিও তাদের
খাবারের ব্যবস্থা করতে পারছি না। তিনি জিজ্ঞাস করলেন, চুলার উপর কি? মহিলা উত্তরে বলল চুলার উপর পাতিলে পানি গরম করছি আর ছেলেদের বুঝানোর চেষ্টা করছি যে, তাদের জন্য খাবার রান্না করছি। তখন ওমর (রা.) বললেন, তোমাদের রাষ্ট্রপ্রধান ওমরকে তোমাদের অবস্থা জানাওনি কেন? মহিলা বলল, ওমর (রা.) রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন কি করার জন্য? একথা শুনার পর ওমর (রা.) রাষ্ট্রীয় গুদামে গেলেন এবং নিজ হাতে একটি বস্তায় চাল, আটা, খেজুর ও ঘি ইত্যাদি নিলেন। অতপর বস্তা নিজের কাঁধে নিলেন। এ অবস্থা দেখে উনার খাদেম বললেন, আপনি এ কি করছেন? এগুলো আমাকে দিন আমি তা বহন করে নিয়ে যায়।
ওমর (রা:) উত্তরে বললেন, কিয়ামতের ভয়াবহ দিনে যখন আল্লাহ বলবেন হে ওমর! আমি তোমাকে রাষ্ট্রপ্রধান বানিয়ে ছিলাম আর তুমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আমার এক বান্দী ও তার অবুঝ শিশুরা ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছিল। তুমি তাদের কোনো খোঁজ খবর নাওনি কেন? সেদিন আমি কি জবাব দিব। তারপর তিনি নিজের কাঁধে বস্তা নিয়ে সেই মহিলার ঘরে গেলেন এবং নিজে উপস্থিত থেকে খানা পাকালেন, বাচ্চাদের ঘুম থেকে জাগালেন এবং তাদের খাওয়ালেন তারপর একটু দূরে এসে বাচ্চাদের প্রতি তাকিয়ে রইলেন। খাদেম জিজ্ঞাস করলেন, আপনি দূরে দাঁড়িয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? উত্তরে ওমর (রা.) বলেন, তাদেরকে আমি কাঁদতে দেখেছি আর এখন একটু হাসতে দেখে যায়। এই হচ্ছে জনগণের মুখে হাসি ফুটানো একজন রাষ্ট্রপ্রধানের প্রচেষ্টা।রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত দায়িত্বশীলগণ যদি জনদরদী না হতে পারেন তাহলে সে রাষ্ট্র কখনো একটি সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না। একবার ওমর (রা.) খেলাফতকালে দুর্ভিক্ষ এসেছিল পূর্ণ নয় মাস এ দুর্ভিক্ষ স্থায়ী হয়। দুর্ভিক্ষকালীন ওমর (রা.) ঘি ও গোশতসহ উত্তম খাবার খাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিলেন একথা ভেবে যে, আমার রাষ্ট্রের গরিব প্রজারা তো এই দুর্ভিক্ষকালীন এ জাতীয় ভাল খাবার জোগাড় করতে পারবে না। এমনকি দুর্ভিক্ষকালীন প্রতিটি দিনই তিনি প্রত্যেকের ঘরে ঘরে গিয়ে কার কি সমস্যা জানতেন এবং সমাধান করে দিতেন।
লেখক: শিক্ষক, জামিয়া কোরআনিয়া সৈয়দা সৈয়দুন্নেছা ও কারিগরি শিক্ষালয় কাজীপাড়া, ব্রাক্ষণবাড়ীয়া
সম্পাদনা: আশিক রহমান