সদাচার, ইসলামি নির্দেশ এবং আমরা
আহমদ আবদুল্লাহ
সাধারণত ভালো কথা, ভালো কাজ এবং ভালো আচরণকে আমরা সদাচর বলে থাকি। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সদাচার বলতে মহান রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ অনুযায়ী দৈহিক ও আত্মিক সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গকে পরিচালনা করাকে বোঝায়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আমি যখন কোনো বান্দা-বান্দিকে ভালবাসি, তখন আমি তার কর্ণ হয়ে যাই, যার দ্বারা সে শুনে। এমনিভাবে তার চক্ষু হয়ে যাই, যার দ্বারা সে দেখে। অনুরূপভাবে তার হাত হয়ে যাই, যার দ্বারা সে ধরে। তার পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে। যদি সে আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে, তাকে আমি অবশ্যই সাহায্য করি।
মেশকাত শরিফে বর্ণিত, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে কাব (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তাওরাত গ্রন্থে বলেছেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) আমার প্রিয় বান্দা। তিনি দুর্ব্যবহারের বদল সদাচারণ দ্বারা দিবেন। তার জন্মস্থান হবে মক্কায় এবং মক্কা হতে হিজরত করে মদিনায় বসবাস করবেন। রাজধানী হবে শ্যাম দেশে।’ বস্তুত খোলাফায়ে রাশেদিনের পরবর্তী যুগে শ্যাল দেশেই ছিল মুসলিম সা¤্রাজ্যের রাজধানী। সেখান হতেই ইসলাম পুরোপুরিভাবে বিস্তৃতি লাভ করে।
উপরোক্ত হাদিস দ্বারা স্পষ্ট হয়, আল্লাহর নবী জীবনে খারাপ আচরণ করেননি এবং রাসুল (সা.) সকল অপরাধ ক্ষমা দিতেন। সুতরাং প্রিয়নবী (সা.)-এর জীবনের কার্যাবলির অনুসরণ করাকে ইসলামের দৃষ্টিতে সদাচার বলা যুক্তিসঙ্গত। এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস আনা অতীব প্রয়োজন মনে করছি। একদা রাসুল (স.)-এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! অমুক স্ত্রীলোক খুব নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং সদকা আদায় করে, কিন্তু সে কটূক্তি দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘সে মহিলা জাহান্নামি।’ পুনঃ সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! অমুক স্ত্রীলোক সম্পর্কে জানা যায় যে, সে নামাজ-রোজা ততবেশি করে না, সদকাও তেমন দেয় না, কিন্তু সে নিজ প্রতিবেশীদেরকে কোনো প্রকার উৎপীড়ন করে না।’ প্রিয়নবী (সা.) বললেন, ‘সে মহিলা জান্নাতী।’ উক্ত হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মানবজীবনের সকল কাজ আল্লাহর প্রিয় হাবিবের আদর্শে পরিচালিত হওয়ার অর্থই হলো, একজন মুসলমান তার কথা দ্বারা, জিহ্বা দ্বারা এবং অঙ্গ-প্রতঙ্গ দ্বারা অন্য মুসলমান ভাইকে কষ্ট না দেওয়া।
মূলত মহৎ এবং উত্তম রীতিনীতির সত্যিকার মাপকাঠি হচ্ছে, উন্নত চরিত্রের মহান গুণাবলি। প্রিয়নবী (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহর কসম সে ইমানদার নয়, আল্লাহর কসম সে ইমানদার নয়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কার সম্পর্কে বলছেন? হুজুর (সা.) বললেন, ‘যার উৎপীড়ন হতে দেশবাসী ও প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’ সুতরাং ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে সদাচারণ দ্বারা ব্যক্তিগত জীবন হতে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত ভালো আচরণ করা।
কবির ভাষায়… ‘তোমাদের ভেতর ভালো সেই জন,
যাহার মাঝে আছে সদাচারণ।’
একজন মানুষের ভেতর তখনই সৎ আচরণ ও ভালো কাজ পূর্ণমাত্রায় বিরাজ করবে, যখন সে সত্যিকার মুমিন হয়ে নামাজী হবে এবং মানুষের উপকার করবেন। সুতরাং সমাজের প্রতি রাষ্ট্রের প্রতি গভীর ভালবাসা ও মমত্ববোধই মানুষের মাঝে ফুটিয়ে তুলে ভাল আচরণ। এতে ব্যক্তির প্রতি ব্যক্তির, সমাজের প্রতি সমাজের ও রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের কল্যাণের দ্বার উন্মোচিত হয়।
লেখক: কলামিস্ট
ধযসধফধনফঁষষধয৭৮৬০@মসধরষ.পড়স
সম্পাদনা: আশিক রহমান