রেমিটেন্স প্রবাহ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে
ড. এ.বি মির্জা আজিজুল ইসলাম
দেশের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে প্রবাসীদের পাঠানো আয়ের টাকা বা রেমিটেন্সকে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানো টাকার পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলার। সে অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিটেন্স কমেছে ২১৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার। টাকার অংকে রেমিটেন্স কমেছে ১৭ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা।
দেশের রেমিটেন্স কমে যাওয়ার দুটি কারণ। প্রথমত হলো, আমাদের সিংহভাগ রেমিটেন্স আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তেলের দাম ক্রমেই কমছে এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বরাবরই সন্তোষজনক নয়। ফলে সেখানে নতুন করে প্রবাসীদের নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। যারা আছে তারা হয়তো কেউ কেউ চাকরি হারিয়েছে। অথবা যারা আছে তারা হয়তো অল্প বেতনে কাজ করছে। আর দ্বিতীয় হচ্ছে, কিছুটা হয়তো রেমিটেন্স আসছে। কিন্তু তা হয়তো অফিসিয়াল চ্যানেলে আসছে না। যেহেতু এক্সচেঞ্জ রেট বা ইন্টার ব্যাংক রেট এবং বাইরের রেটের মধ্যে বেশ তফাৎ আছে। সে কারণে লোকে হয়তো হুন্ডির মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে অর্থ পাঠাচ্ছে। যেটা অফিসিয়ালি পরিসংখ্যানে আসছে না। তবে সার্বিকভাবে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ার বড় কারণ হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি।
আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে রেমিটেন্স বড় ভূমিকা রাখে। ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স যারা পাঠাচ্ছে সেটা নিশ্চয়ই দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু রেমিটেন্স কমে যাওয়াতে নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এ পরিস্থিতিতে স্বল্প মেয়াদে খুব বেশি কিছু করা সম্ভব বলে মনে হয় না। তবে স্বল্প মেয়াদে যেটা করা উচিত সেটা হচ্ছেÑ ব্যাংক বা অন্যান্য যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, যারা রেমিটেন্স প্রবাহ চালু করে তাদেরকে উৎসাহিত করা যেতে পারে যাতে। যেসব প্রবাসী বিদেশে কাজ করছে তাদের সঙ্গে আরও বেশি যোগাযোগ করে রেমিটেন্সটা আনার ব্যবস্থা করা দরকার। আরেকটি বিষয় হচ্ছেÑ এক্সচেঞ্জ রেট সম্পর্কে সরকার কিছুটা চিন্তা-ভাবনা করতে পারে। এক্সচেঞ্জ রেট কমানো যেতে পারে। তবে সেটার আবার বেশি করতে গেলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।
আমাদের ৭-৮টি দেশ থেকে রেমিটেন্স আসে, সেটা ৮৯-৯২ শতাংশ। যেসব দেশে শ্রমের চাহিদা আছে, সেসব দেশে যদি শ্রমিক পাঠাতে পারি তাহলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। আর যে সমস্ত শ্রমিক এখন বিদেশে যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগই অদক্ষ। আমরা যদি দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারি তাহলে রেমিটেন্স প্রবাহ আরও বাড়বে। সেজন্য সরকারকে এ বিষয়ে কোন দেশে কী ধরনের শ্রমের চাহিদা আছে সেদিকটি বিবেচনা করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ নিতে পারে।
পরিচিতি: অর্থনীতিবিদ
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: আশিক রহমান