‘কাইল সকালে হইবোরে তোর বিয়া’
আশিকুজ্জামান টুলু
রাজশাহীর প্রোগ্রামের অভাবনীয় সাফল্যের পর ওরা ব্যান্ড নিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম জীবনের উপর ঝুঁকি নিয়ে করা শুরু করে দিল। মামা হঠাৎ একদিন বাসায় এলেন এবং আমাকে বললেন: জানিস ওদের কি হয়েছিল? আমি: না তো মামা, জানি না। কি হয়েছিল ওদের? মামা: আর বলিস না, ওরা গতকাল শ্যাওড়াপাড়ায় প্রোগ্রাম করতে গিয়েছিল। রাত তিনটার দিকে (মামাত ভাইয়ের নাম ধরে) ফোন করে আমাকে বলল যে আব্বা ৫ হাজার টাকা নিয়ে এখনি আসেন। আমি সেই রাতে ৫ হাজার টাকা নিয়ে গেলাম ওখানে। যেয়ে দেখি ওদের আটকে রেখেছে। আমি: কেন? মামা: ওরা প্রথমে বেসুর গেয়েছে, তারপর তেসুর, ব্যস, ওদেরকে বেঁধে রেখেছে। শেষে আমি ৫ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছি। মামার কথা শুনে প্রচ- হাসি পেল কিন্তু খুব কষ্টে হাসি সংবরণ করতে হলো। যেকোনো শিল্পই যে গায়ের জোরে হয় না এই কথাটা গুটিকয়েক লোক মোটেই বুঝতে চায় না।
রাজশাহীর প্রোগ্রামের ঠিক ছয় মাস পরের ঘটনা। আমার সেজো মামাত ভাই, মেঝো মামাত ভাই, লিড গিটারিস্ট সবাই এলো আমার বাসায়। আমি বললাম: আবার…!? আবার কি কোনো প্রোগ্রাম? আবার সেই কাইল সকালে হইব রে তোর বিয়া? সঙ্গে বুক ফাস, বুক বুক ফাস? সেজো মামাত ভাই বলল: না ভাই, কোনো প্রোগ্রাম না, এবার আমরা ক্যাসেট বের করব। আমি: তোদের পায়ে ধরি আমারে মাফ কইরা দে। আমি পারুম না, আমি ভিশন বিজি। মামারে গিয়া আবার বলিস না কিছু প্লিজ। সেজো মামাত ভাই: আপনাকে তো আমরা টাকা দিব। আমি: লাগে টাকা আমি দিমু তোদের ক্যাসেট করার জন্য, তবু আমারে এইবারের মতো মাফ কইরা দে। তোরা চাইলে আমি সাজেশন দিতে পারি। সেজো মামাত ভাই: ঠিক আছে, আপনি সাজেশন দেন কি করব। আমি: কয়টা গান? সেজো মামাত ভাই: ১২টা। আমি: তুই একটার বেশি গাইস না। লিড গিটারিস্ট রে ১১টা দিস। সেজো মামাত ভাই: ঠিক আসে, কিন্তু কম্পোজিশন এ একটু যবষঢ় করবেন। আমি: অবশ্যই করব। চলে আশিস।
ছয় মাস পরে ওরা এলো। আমার খালাত ভাই ওদের ক্যাসেট করে দিয়েছে। আমার প্রথম প্রশ্ন: তোদের লিড গিটারিস্ট কয়টা গেয়েছে? সেজো মামাত ভাই: একটা। আমি: আর তুই? সেজো মামাত ভাই: এগারোটা। আমি আগেই বুঝেছিলাম এরকম কিছু একটা হবে এবং এটাই ছিল আমার প্রথম ও শেষ প্রশ্ন। অ্যালবামের প্রথম গান ছিল ‘কাইল সকালে হইব রে তোর বিয়া’ এবং অ্যালবামের নামও ‘কাইল সকালে হইব রে তোর বিয়া’। আসলে ওই সময়ে ওদের বিয়েটা খুব জরুরি ছিল। কারণ ওদের বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত ওদের মাথা থেকে ব্যান্ড এর ভূত নামছিল না। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ওরা আর সাহস করে নাই গাইতে ‘কাইল সকালে হইব রে তোর বিয়া’। রুবেলও আর বাজায় নাই ‘বুক ফাস, বুক বুক ফাস’। (শেষ)
লেখক: কলামিস্ট ও সঙ্গীতশিল্পী
সম্পাদনা: আশিক রহমান