জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উন্নতবিশ্ব এবং আমরা
তাসলিমা আক্তার
বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এর প্রধান কারণ হলোÑ আমাদের ভূমি অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক। দেশের যে সংস্কৃতি অর্থাৎ বিয়ে, সন্তান তো একেবারই স্বাভাবিক। বিয়ের পর যদি কোনো নারীর সন্তান না হয়, তখন এ সে পরিবারের মর্যাদা হারায়! অনেক ক্ষেত্রে ওই নারীর সংসারটি তখন টিকিয়ে রাখে। আমাদের দেশের যে সাংস্কৃতিক, সেখানে সন্তানই হলো ভবিষ্যতের একটা সম্পদ। আরেকটি বিষয় হলো, পুরুষ সন্তান কামনা করা হয় পরিবারগুলো থেকে, যাতে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা এবং বৃদ্ধ বয়সে দেখা-শোনা করতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে মানুষ বৃদ্ধ হলে সরকার দায়িত্ব ভার গ্রহণ করে। বৃদ্ধ বয়সে একজন ব্যক্তি কোথায় থাকবে, তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা এবং ভাতা এ বিষয়গুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো পদ্ধতি নেই। মানুষ মনে করে, বৃদ্ধ বয়সে আমি কোথায় যাব। আমি যখন অসুস্থ হবো তখন কে আমাকে সেবা করবে অথবা মারা যাওযার পরে কে মাটি দিবে। স্বাধীনতার পরে ১৯৭৪ সালে বিভিন্নভাবে দেশের জনসংখ্যা কমানোর একটা পরিকল্পনা করা হয়েছিল, এটা সম্ভবত আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটা অংশ ছিল। জনসংখ্যা সংক্রান্ত সমস্যা শুধু বাংলাদেশেরই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে শুধু বাংলাদেশকেই দেখলেই হবে না, দেখতে হবে সামগ্রিকভাবে, সবদিক থেকে।
অনুন্নত দেশগুলোতে যদি জনসংখ্যার হার বাড়তে থাকে তাহলে একসময় উন্নত দেশগুলোতে মানুষ ভিড় করবে। আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত এই সমস্ত দেশগুলোতে প্রচুর পরিমাণ অভিবাসী হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, নেপালের মতো উন্নয়নশীল বা দরিদ্র দেশগুলো থেকে সেসব মানুষগুলো গেছে তা কমাতে হবে। উন্নত দেশগুলোর জন্য অনুন্নত দেশের জনসংখ্যা একটা হুমকি হয়ে উঠতে পারে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বা জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হলো একটি সন্তান অথবা দুটি সন্তানই যথেষ্ট। অথচ আমরা কিন্তু কখনোই বলি না, এই জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে পারব। ছোট এই দেশটিতে আমাদের জনশক্তিকে একটা কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন।
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা নিয়ে একটা টার্গেট থাকে, পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সুপলিসি বা পরিকল্পনা নেই বললেই চলে। যা আছে তারও সঠিক চর্চা হয় না। যা খুবই হতাশাজনক।
পরিচিতি: সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত গ্রহণ: ফাতেমা-তুজ-জোহরা
সম্পাদনা: আশিক রহমান