ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠকের ফলে পরস্পরের আগ্রাসী মনোভাব কমবে
অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন
খুব সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। জার্মানিতে জি-২০ সম্মেলনের এক ফাঁকে দুই নেতা এই বেঠকে বসেন। এ বৈঠকের ফলে দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা উন্নয়ন হলেও পররাষ্ট্রনীতিতে খুব বেশি পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের যে গ্যাপ ও ভিন্নমুখী অবস্থান সে অবস্থানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে না। কারণ যে ধরনের ইস্যু বা স্বার্থ নিয়ে অবস্থান করছে, সে জায়গা থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে চাইলেও বড় কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন না। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে কিভাবে তার প্রেসিডেন্সি আরও শক্তিশালী করা যায় এটাই মূল বিষয়। এই কাজটি হয়তো তিনি বিতর্কের মাধ্যমে করেন, অন্যরা হয়তো সমঝোতা বা ভদ্রতার মাধ্যমে করে থাকেন। সুতরাং ট্রাম্প মনে করেন, যতবেশি বিতর্ক তৈরি করা যাবে ততবেশি তিনি তার ক্ষমতা শক্তিশালী করতে পারবেন।
আমি মনে করি, সাময়িকভাবে বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার সম্পর্ক যে অবনতিশীল জায়গায় যাচ্ছিল সেখানে হয়তো কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থা আসতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা আসবে কিনা তা এখনই বলা মুশকিল। দুই নেতার স্বার্থের জায়গাটি একেবারেই বিপরীতমুখী। সেখানে সহযোগিতার সুযোগ খুবই সীমিত। তবে একটা দিক থেকে ভাল হতে পারে দুদেশের জন্য বা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য দুদেশের মধ্যে যদি যুদ্ধাবস্থা না থাকে। তাহলে হয়তো একটা স্থিতিশীল বিশ্ব আমরা দেখব। এই সুযোগে চীন, ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা জার্মানি যে ভূমিকা রাখছে তা হয়তো রাখতে পারে। মানে সব রাষ্ট্রের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে তাতে বিশ্ব স্থিতিশীলতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলা, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করা যাবে। অতীতে এ ধরনের সম্মেলন যে দাপটের সঙ্গে অংশগ্রহণ করত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই প্রভাব এখন অনেকটাই কমে গেছে।
তবে দুই নেতার এই বৈঠক বিশ্ব রাজনীতির জন্য ভালোই হবে। দুজনের এই বৈঠকের ফলে দুদেশের সম্পর্কের জায়গাটাতে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা আছে। সম্পর্ক উন্নয়নের ফলে পরস্পরের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বা আগ্রাসী মনোভাব তা হয়তো অনেকটাই কমবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বানের সময় রাশিয়ার হ্যাকিং বা অন্যান্য বিষয়ে ট্রাম্প যতটা না সোচ্চার ছিলেন, তার চেয়েও বেশি সোচ্চার ছিল বিরোধী দল ডেমোক্রেট। রাশিয়া প্রসঙ্গে ট্রাম্প আগেও সোচ্চার ছিলেন না, এখন যতটা গুরত্ব দিচ্ছেন। তবে পোল্যান্ডের ভাষণে রাশিয়া সম্পর্কে যা বলেছেন তিনি সেটি হলো একটি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য। কিন্তু পুতিন এবং ট্রাম্পের সম্পর্কের যে কেমিস্ট্রি আছে সেটা হয়তো দুদেশের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক, স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য বা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যে অস্থিরতা বিরাজ করছে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পাড়ে। তবে আমরা চূড়ান্তভাবে আশাবাদী হতে পারছি না।
পরিচিতি: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাবি
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: আশিক রহমান