চিকুনগুনিয়ার কারণে নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষ বিপদে
রিকু আমির : ঢাকায় মশাবাহিত চিকুনগুনিয়ার প্রভাবে সব আয়ের মানুষ আক্রান্ত হলেও নি¤œ-মধ্য আয়ের মানুষরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে আছেন। বিশেষ করে যারা দিনের উপার্জন দিনে করেন। তাদের ব্যক্তি-সংসার জীবনে অভাব-অনটন স্পর্শ করে ফেলেছে। ঋণের জালেও আটকা পড়ে গেছেন কেউ কেউ।
ঢাকার পান্থপথে ছোট একটি মুদি দোকানের স্বত্বাধিকারী রাসেল আহমেদ। গত ১০ দিন ধরে তিনি ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারছেন না। গতকাল সোমবার সকালে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, একটা দোকান ১০ দিন বন্ধ থাকা মানে তো বুঝেনই। লাটে উঠছে ব্যবসায়। বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ফোন দেয় বকেয়া টাকার জন্য। অসুস্থতার জন্য দোকান বন্ধ বললেও মানতে চায় না।
কাওরান বাজারের খুচরা ফল বিক্রেতা জমশেদ আলী স্ত্রী সুলতানা, কিশোর বয়সী দুই সন্তানসহ মাসিক ৮ হাজার টাকার বিনিময়ে তেজগাঁওয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। গতকাল তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, সারাদিন বাসায় পইরা থাকন লাগে। কামে না যাইতে পারলে তো আমার পকেটে পয়সা আসে না। বউ-বাচ্চার জন্য ভাল হাটবাজারও করতে পারি না। কমলাপুর রেলস্টেশনে কুলির কাজ করেন জগলুল। তিনি বলেন, ডাক্তার কইছে ভালা ভালা খাওন খাইতে। কইত্তে খামু? হারাদিন গিরায় গিরায় বেদ্না করে। কাম করতারি না। নিজে খামু কী, বউ বাচ্চারে খাওয়ামু কী?
বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাম্প্রতিক একটি জরিপে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশে এবার যে রকম হারে চিকনগুনিয়া রোগ ছড়িয়েছে, তা সাম্প্রতিককালে আর দেখা যায়নি।
ইন্সটিটিউটের পরিচালক মিরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, ২০০৮ সাল থেকে এই রোগ বাংলাদেশে সনাক্ত হলেও এ বছরই সবচেয়ে বেশি প্রকোপ। ঢাকায় মোবাইল নাম্বারের ভিত্তিতে র্যানডমলি আমরা ৪ হাজার মানুষের মধ্যে একটি জরিপ করেছি। এখনো সেই জরিপের ফলাফল চূড়ান্ত না হলেও প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছেÑ এই ৪ হাজার লোকের মধ্যে ৩৫৭ জন চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত।
একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী ইমরান বলেন, একবার জ্বর হয়ে যাওয়ার পর এখন আবার শরীর খারাপ হয়েছে। অনেকদিন কাজে যোগ দিতে পারিনি। গত দুইদিন ধরেও কাজে যেতে পারছি না। একদিন যেতে না পারলে বেতন কেটে রাখে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের মেডিকেল অফিসার খাইরুল বাশার জানান, প্রতিদিন তিনি বহির্বিভাগে যতজন রোগী দেখেন, তার মধ্যে ৩০ শতাংশ আসছেন জ্বর নিয়ে। এই ৩০ শতাংশের মধ্যে ২০ শতাংশের মধ্যে চিকুনগুনিয়া জ্বরের লক্ষণ থাকে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই মধ্য আয়ের বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ডেঙ্গু রোগের বাহন এডিস মশাই চিকুনগুনিয়া রোগেরও কারণ। এখনো এই রোগের পুরোপুরি প্রতিকার আবিষ্কৃত হয়নি। চিকিৎসকদের ধারণা, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই রোগের প্রকোপ থাকতে পারে। ততদিন মশা থেকে সতর্কতা, মশারি বা ওষুধ ব্যবহার করাই হবে এ থেকে রক্ষার সবচেয়ে ভালো উপায়। একইসঙ্গে বৃষ্টির পর যাতে পানি জমে থাকতে না পারে, যেখানে মশা ডিম পাড়তে পারে, সেদিকেও নজর দিতে তারা পরামর্শ দিয়েছেন। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ