চিকুনগুনিয়া মহামারী রূপ নিল কেন?
রবিউল আলম
সামাজিক দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার একাধিক মন্ত্রণালয় ও সংস্থা গঠন করে দিয়েছেন। স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের অধীনে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ। নগর, বন্দর, গ্রামীণ জনপদ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, কিছু অবকাঠামো রাস্তা, ড্রেনেজ ও অন্যান্য দায়িত্ব তাদের। পরিচ্ছন্ন নগর সেবার অংশ বাস্তবায়নে সরকারের কিছু পরিকল্পনা থাকে। বর্তমান মেয়রগণ তা বাস্তবায়নে ঢাকাকে দৃষ্টিনন্দন করতে একের পর এক আধুনিক ডাস্টবিন তৈরি করে ময়লা-আবর্জনা একই স্থানে রেখে পরবর্তীতে শহর থেকে দূরে নিয়ে যাওয়ার সব ধরনের চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে ঢাকায় ছোট ডাস্টবিনে ময়লা ফেলুন আহবান করে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল, যদিও তা ব্যর্থ হয়েছে। চেষ্টা করা হয়েছিল মানুষকে সচেতন করার জন্য। চিকুনগুনিয়া নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, তারই অংশ হিসেবে মশক নিধন করতে সিটি কর্পোরেশনের হাজার হাজার কর্মীবাহিনীকে রাস্তায় নামানো হয়েছে। এই কর্মসূচি কতটুকু বাস্তবায়িত হবে এবং নগরবাসী চিকুনগুনিয়া থেকে আদৌ মুক্তি পাবে কি না জানি না, তবে মশার জন্মস্থান চিহ্নিহ্নত না করে, মশাকে নির্মূল করার চেষ্টা না করে, ওষুধ দিয়ে কি লাভ হবে?
মশা সবচেয়ে বেশি জন্মগ্রহণ করে জমানো পানি, গরুর গোবর, পচা রক্ত ফেলে দেওয়া নাড়ি-ভুড়ি, হাড়, পচা চামড়ায়। একসময় মাংস ব্যবসায়ীদের যেখানে সেখানে পশু জবাই বন্ধ করতে কাপ্তান বাজারসহ কিছু জবাইখানা নির্মাণ করেছেন, মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতি মাসে একটি করে সচেতনতামূলক সভা করতেন। এখন কি হয়েছে জানি না, সেই সভাগুলো এখন আর হয় না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আলোচনা ও জনসচেতনতামূলক সভার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। উত্তর সিটি করপোরেশন কি একই কাজ করছে?
প্রতিদিন ১৫শ থেকে ২ হাজার গরু মহিষ জবাই হলেও জবাই খানায় জবাই করা যায় ২৫ থেকে ৩০টি গরু, বাকি গরু মহিষ, ছাগল-ভেড়া কোথায় জবাই হয় প্রশ্ন থাকতেই পারে। পশু জবাই করার পর এর বর্জ্য, মলমূত্র, রক্ত পানি কোথায় যায়? যত আধুনিক নগর গড়ে তুলি না কেন, নগর পরিষ্কার রাখতে হলে, মানুষকে স্বাস্থ্যসম্মত মাংস খাওয়াতে হলে, মশার কামড়ের মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া থেকে রক্ষা পেতে হলে, মশার ওষুধ প্রয়োগের পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে, আধুনিক পশু জবাইখানা নির্মাণ করতে হবে, যথাতথা পশু জবাই বন্ধ করতে হবে।
দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সহায়ক পশুর বর্জ্য রক্ষা করে রপ্তানি করার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। জনগণকে এ সকল বিষয়গুলো বুঝাতে হবে। জানি না ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন জনস্বার্থে ঢাকাকে আধুনিক নগর,পরিবেশ রক্ষায় রপ্তানিযোগ্য পণ্য পশুর বর্জ্য রক্ষায় জবাইখানা নির্মাণ ও মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে আলোচনা করবেন কি না, না কি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের গরু হাটের ইজারাদারের সঙ্গে লুটের অংশ অংশীদার হয়ে থাকবেন। চিকুনগুনিয়া থেকে মুক্তির লক্ষ্যে জনসচেতনতা ছাড়া বিকল্প নেই, পরিকল্পিত জবাইখানা ছাড়া মুক্তি নেই।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান