নারী-শিশু নির্যাতন এবং আমাদের সমাজব্যবস্থা
ড. সামিনা লুৎফা
ক্রিকেট আমরা পছন্দ পছন্দ করি, ভালোবাসি। ক্রিকেটাররা দেশের জন্য অনেক সম্মান বয়ে আনেন। তাদের প্রতি এদেশের মানুষের অনেক শ্রদ্ধা আছে। ভালোবাসা আছে। অনেকেই তাদের পছন্দ করে। অনুসরণ করে, অনুকরণ করে। তাদেরকে আইডল হিসেবে গ্রহণ করেছে শিশু বা তরুণেরা। তাদের আদর্শ মেনে সামনে এগোয়। কিন্তু যাকে তরুণেরা আদর্শ মনে করে তারা যদি অনৈতিক, আদর্শবর্জিত কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তাহলে তা অত্যন্ত খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি হয়। আমরা জানি, সাহাদাত হোসেন রাজীব-এর কথা। শিশু নির্যাতনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আছে। আরাফাত সানি, রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে নারী নিপীড়ন, নির্যাতন, সম্পর্ক স্বীকার না করে নেওয়ার অভিযোগ আছে। খুব সম্প্রতি একই অভিযোগ উঠেছে ক্রিকেটার মোহাম্মদ শহীদের বিরুদ্ধেও। স্ত্রীকে স্বীকার না করা, তাদের যথাযথ খোঁজখবর না রাখা, প্রাপ্য সম্মান না দেওয়ার ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে তা খুবই দুঃখজনক এবং অনাকাক্সিক্ষত। এটা তাদের কাছে মানুষ আশা করে না। তবে আমাদের এ কথাও মনে রাখতে হবে, ক্রিকেটাররা দেশের বাইরের কেউ নন, এ সমাজেরই মানুষ। সমাজের ভেতরে যে সহিংস মনোভাব রয়েছে তাতে নারী-শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়। নির্যাতকেরা সমাজের নানা পেশার সঙ্গে জড়িত। এরা ভিন্ন ভিন্নভাবে নির্যাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, যা জনপ্রত্যাশার সঙ্গে যায় না।
তরুণেরা ক্রিকেটারদের মতো করে নিজেকে দেখে, তাদের মতো হতে চায়। কিন্তু এই ক্রিকেটাররাই যখন এমন অনৈতিক কর্মকা-ের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করেন তখন তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সমাজের ওপর। বিশেষ করে যারা তাদের অনুসরণ তাদের ওপর। যারা এসব অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব আমরা জানতে পেরেছি গণমাধ্যমের কল্যাণে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অন্যায়ের প্রমাণ পেলে তাদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিচারের ব্যবস্থা করা না গেলে সমাজে দৃষ্টান্ত তৈরি করা যাবে না। সুতরাং এই বিষয়গুলো তদন্ত এবং বিচার হওয়া প্রয়োজন। যাতে করে একটা দৃষ্টান্ত তৈরি হয়। যাতে করে দেশের সাধারণ শিশুরা তাদের থেকে খারাপটা না শিখে। এই উদাহরণটা তৈরির দায়িত্ব বাংলাদেশের। আমাদের সমাজে নারীদের সবসময় দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয়। কাগজে কলমে তাদের যেটুকু অধিকার আছে সেটুকুও আমরা স্বাভাবিকভাবে দিতে চাই না। এমতাবস্থায় নারীকে সচেতন হতে হবে। নিজের অধিকার নিজেকেই বুঝে নিতে হবে। তা না হলে সহিংসতা চলতেই থাকবে। নারীও একজন মানুষ, তাদেরকে সেই সেই জায়গা থেকেই দেখতে হবে। নারীকে সম-নাগরিক এবং সম-অধিকারের জায়গা থেকে দেখতে হবে।
ক্রিকেটারদের এমন আচরণ করার কারণ সামাজিক অবক্ষয়জনিত কিনা জানি না। অবক্ষয় হবে কেন? কারণ সমাজের বেশির ভাগ লোকই এমন করেই ভাবে। ফলে সমাজটাই এমন। নির্যাতিতদের নিয়ে ভাবার লোক কমই আছে। নারীকে তার সমান মর্যাদা ও গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের অনেকেই মনে করেন, নারী পুরুষের নিচে থাকার জন্যই জন্মেছে! এটাই এখন এখানকার সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা খুব জরুরি। তথাকথিত পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে।
পরিচিতি: অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাবি
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান