জঙ্গিবাদ, নির্বাচন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার অবদান
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে দেশে আগুন সন্ত্রাস চলেছিল, মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো বর্বরতা চলেছিল তা ছিল নজিরবিহীন। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে টানা তিনমাস নৃশংসতা, পেট্রলবোমার মতো জঘন্য কর্মকা- হয়েছিল এদেশের মানুষ তা ভুলে যায়নি। ওই সময় বাংলাদেশের জন্য নৈরাজ্যের সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিল। যে ধরনের নৈরাজ্য আমরা ইরাক, সিরিয়ায় দেখতে পাই। এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা করেছিল বিএনপি জোট। তারা দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার পাঁয়তারা করেছিল, কিন্তু তাদের সেই অপচেষ্টা সফল হয়নি। সফল হতে দেয়নি এদেশের মানুষ।
বাংলাদেশের মানুষ শুভবুদ্ধি সম্পন্ন, আন্দোলনের নামে উগ্রতা কখনোই পছন্দ করে না তারা। এদেশে উগ্রবাদ হবে, জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে নিরীহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হবে এমনটি কখনো সহ্য করে না এদেশের জনগণ। বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতির সঙ্গে জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ, সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি, আন্দোলন যায় না। এদেশের প্রকৃতি যেমন কোমল, ¯িœগ্ধ, এদেশের মানুষের মনে মাঝেমধ্যে বিদ্রোহ, বিক্ষোভ দেখা দিলেও প্রকৃতিগতভাবেই এদেশের মানুষও কোমল, শান্ত, ¯িœগ্ধ।
বিএনপি ২০০৬ সালে অত্যন্ত অন্যায়ভাবে তত্ত্বাবধায়ক ধারণাটিকেই ধ্বংস করে দিল। তখন তারা তাদের মতো তত্ত্বাধায়ক সরকার নির্ধারণ করল, সেটা আবার পরিবর্তিত হয়ে গেল, আধা সামরিক সরকার ক্ষমতায় এলো। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকার কথা ছিল ৩ মাস, তারা থাকল প্রায় দুই বছর। ছিয়ানব্বই সালের ১৫ নির্বাচনে তো কোনো বিএনপিকে ছাড়া কোনো দলই অংশগ্রহণ করেনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তো বহু দল অংশগ্রহণ করেছে। আপনি বলতে পারেন, ১৫৩ বা ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ওই নির্বাচনে। কিন্তু এখানে সংবিধানের ধারা অনুসরণ করেই নির্বাচনটি হয়েছে। বিএনপি ১৯৯৬ সালে সংবিধানকে সম্পূর্ণরূপে নষ্ট করে দিয়েছিল। নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে সবকিছুকেই একরকম ধ্বংস করে দিয়েছিল।
নির্বাচন কোন ফরম্যাটে হবে তা নিয়ে পরামর্শের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনা টেলিফোন করেছিলেন। আহ্বান জানিয়েছিলেন যে, আসুন আমরা সবাই মিলে একটি সরকার গঠন করি, যার অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করে নির্বাচন দিই আমরা। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া তো সেই ডাকে সাড়া দেননি। আর দ্বিতীয়বার নির্বাচনকে আমরা দেব তার পরিবেশও তো রাখেনি বিএনপি। কারণ ২০১৫ সালে বিএনপি যে জ্বালাও-পোড়াও করল, তারপরও কি একটা অল্প সময়ের মধ্যে একটা জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার পরিবেশ ছিল?
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু দক্ষতার সঙ্গে তৎকালীন বঙ্গবন্ধুর সরকার সমস্যার সমাধানও করেছিল। যদিও সে সময় বিশ্ব পরিস্থিতি অত্যন্ত প্রতিকূল ছিল বাংলাদেশ এবং গোটা দুনিয়ার জন্যও। কারণ তখন সারা বিশ্বজুড়ে খাদ্যঘাটতি ছিল। যুদ্ধবিগ্রহ ছিল। নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু মাত্র কয়েক মাসে দেশবাসীর জন্য একটি অসাধারণ সংবিধান উপহার দিলেন। দেশের অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগের ভূমিকা অনন্য। বিশেষ করে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা দলটি অসাধারণ করছে। ’৯৬ সালে খুব ভালো করেছে। তারপর ২০০৯ সালে দেশের রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব দলটি। এই তাদের অর্জন কী তা দেশবাসী সাক্ষী। গোটা দুনিয়ায় সাক্ষী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে দেশের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি, আগুন সন্ত্রাস মোকাবিলা করে আজ দেশকে শেখ হাসিনার সরকার কোথাও নিয়ে যাচ্ছে তা বিস্মিত গোটা দুনিয়া। আমরা পদ্মা সেতুর মতো বড় অবকাঠামো নিজের অর্থায়নে করছি। উন্নয়ন, অগ্রগতি বাংলাদেশের বেগবান হচ্ছে অবিশ্বাস্যভাবে। এটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই। আমরা পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ আমল মিলিয়ে প্রায় ৪৫ বছর যে খাদ্যঘাটতি দেখছিল এদেশের মানুষ, এখন আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। যদিও এই সময়ে জমির পরিমাণ কমেছে, কিন্তু খাদ্য উৎপাদন চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাধীনতাসংগ্রামের সময় ৬০ শতাংশ লোক আমাদের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছিল, এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২২ শতাংশে। এটা হয়তো এখন ২০ শতাংশেরও নিচে নেমে গেছে। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু আওয়ামী লীগের সরকারের সময়োচিত সঠিক সিদ্ধান্তের ফলেই। চার দলীয় জোট কিছুই করেনি এদেশের উন্নয়নের জন্য। কারণ তাদের সময়ে কৃষিতে কোনো অগ্রাধিকার ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়ে সাধারণ মানুষের সুবিধা হয় এমন নীতি গ্রহণ করে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়া একদম পছন্দ করে না। ভর্তুকির ঘোর বিরোধী তারা। তা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ তথা চৌদ্দ দলীয় সরকার কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে গেছে। তার ফলে দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ম্বর।
একাত্তরের আমাদের বিরুদ্ধে যে অন্যায়-অবিচার করা হয়েছিল তা থেকে আমরা বের হয়ে আসছি। পাকিস্তানি বাহিনীর এদেশীয় দোসর রাজাকার আলবদর-আলশামসদের বিচার হচ্ছে। বিচার পাচ্ছে স্বজনহারা মানুষ। এটা বিরাট বিষয়। রাজাকারদের এদেশে বিচার হবে কখনো কি কেউ ভেবেছিল? ভাবেনি। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়েছে এদেশে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার ছিল বলেই।
জঙ্গিবাদ তো শুধু বাংলাদেশেই হয়নি, সারা বিশ্বজুড়েই হয়েছে। বাংলাদেশ বরং খুব দ্রুত জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। জঙ্গিবাদ অনেক সময় মানুষের হতাশার মধ্যে থাকে, অনেক সময় মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়, ধর্মান্ধতা থেকেও জঙ্গিবাদের জন্ম হয়। যেখান থেকেই জঙ্গিবাদের জন্ম হোক, এদেশে জঙ্গিবাদের কোনো জায়গা নেই। বর্তমান সরকার জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করবেই।
পরিচিতি: উপদেষ্টাম-লীর সদস্য, আওয়ামী লীগ
সম্পাদনা: আশিক রহমান