সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে তৈরি পোশাক শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী নয় তরুণ উদ্যোক্তারা
আরিফুর রহমান তুহিন : উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের প্রধান উৎস রপ্তানি বাণিজ্য। আর এই খাতের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে। কিন্তু বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী নয় তরুণ উদ্যোক্তারা। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কিছু তরুণ তাদের প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলেও নতুন করে কেউ পোশাক শিল্পে না জড়ানোয় অনেকটা বিনিয়োগহীন এই শিল্প। তরুণ উদ্যোক্তাদের দাবি- তৈরি পোশাক শিল্পে বর্তমানে বিনিয়োগ করাকে ঝুঁকি মনে করছে তারা। আর বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সরকারের উদাসীনতাই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি জন্য দায়ি।
বর্তমান এই দুঃসময়ে নতুন এক বিনিয়োগকারী সিলভার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহিন দেওয়ান জানান, তৈরি পোশাক শিল্প এখন অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে চলছে। তার মতে, অনেকটা ঝোঁকের বসে তিনি এখানে বিনিয়োগ করেছেন। বন্ধুরা তাকে এই শিল্পে বিনিয়োগে নিষেধ করলেও ভালো কিছু পাওয়ার আশায় এখানে আসেন তিনি। এখন না পারছেন ছাড়তে, না পারছেন ঠিকমত চালাতে। প্রতি বছর শ্রমিকদের বেতন বাড়ছে। উৎপদন খরচ বাড়ছে কিন্তু ক্রেতারা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করছে না। ফলে লোকসান দিয়েই চলছে তার স্বপ্নের পোশাক কারখানা। তবে তিনি এখনও আশাবাদি দেশের পোশাক শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। তার মতো অনেক নতুন বিনিয়োগকারী এই শিল্পে আসবে।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্ততকারী ও রপ্তানি সংগঠন (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দেশে গার্মেন্টস শিল্পে নতুন করে বিনিয়োগ করার কোনো পরিবেশ নেই। অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে কেউ আর এখানে বিনিয়োগ করতে আসবে না। বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা এতটাই খারাপ যে লাভ নেই বললেই চলে। ফলে কেউ এখানে নতুন বিনিয়োগের চিন্তা করছে না। কিভাবে নতুনদের বিনিয়োগকারিদের আগ্রহী করে তোলা যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, পোশাক শিল্পে তরুণদের বিনিয়োগমুখী করা খুব কঠিন হবে। তবে সরকার যদি প্রণোদনা দেয় তাহলে হয়ত কিছু উদ্যোক্তা এগিয়ে আসতে পারে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে দেশে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়ছে না। এর কারণ হলো যে সমস্ত অবকাঠামোগত সমস্যা ছিলো সেগুলো খুব বেশি নিরসন হয়নি। জ্বালানি পাওয়া, যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুততার সাথে চলাফেলা করতে পারা, নিষ্কন্টক জমিতে শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে পারা বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলে। অথচ দেশে এগুলোর অভাব রয়েছে। সরকার বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুতের জন্য বড়বড় প্রকল্প হাতে নিলেও সেগুলো এখনো শেষ করতে না পারায় বিদ্যুতের সমস্যা রয়ে গেছে। এমনকি সরকার দেশব্যাপী ১০০টি বিশেষ শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার কথা বলেছে। অথচ এর একটাও এখন পর্যন্ত চালু করতে পারেনি। বেসরকারিভাবে যেগুলো করার কথা ছিলো সেগুলোও চালু হয়নি। অথচ সেগুলো ছিলো ব্যক্তি বিনিয়োগ খাতকে সমর্থন দেয়ার জন্য। সর্বোপরি বিনিয়োগকারীদেরও কোথাও যেন একটা অনিশ্চয়তাবোধ কাজ করে দেশে বিনিয়োগ করার জন্য। তাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ওনারা কি আস্থা পান না দেশে বিনিয়োগ করার জন্য। নইলে আমাদের দেশ থেকে টাকা নিয়ে ওনারা আফ্রিকা বিনিয়োগ করছে? বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আফ্রিকাকে তারা বাংলাদেশের চেয়ে বড় মনে করে। এটা দেশের জন্য একটা অশনি সংকেত বলে মনে করেন তিনি।
নারী উদ্যোক্তা সমিতির সাবেক সভাপতি নাসরিন আউয়াল মিন্টু বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী। এই শিল্প বিকাশের ফলে নারীরা স্বাবলম্বী হতে চলছিল। কিšুÍ বর্তমান সময়ে এই শিল্পে নতুন কোন বিনিয়োগ নেই। দুই-একজন যারা বিনিয়োগ করছে তারা তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানেই করছে। ফলে শুধু নারীরাই নয়, দেশের অর্থনীতিও পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ব্যবসায় ঠিকমত ঋণ না পাওয়া, মন্দা পরিস্থিতি এবং বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকায় তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। সরকারের উচিত দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে তরুণদের তৈরি পোশাক শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলা। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ