অভিনব বিয়ে অনুষ্ঠান
আহমদ আবদুল্লাহ
চারদিকে লোকারণ্য ভরপুর। সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ প্লেট নিয়ে। বসার জায়গা নেই কোথাও। খাবার নিতে হয় নিজ হাতে। খেতে হয় দাঁড়িয়ে। খাবার এগিয়ে দেওয়ার মতোও নেই কেউ। কিছুক্ষণ বিচরণ করলাম। আমাদের দেখে পরিচিত একজন কাছে এলেন। সালাম দিয়ে বললেন, হযরত এদিকে আসুন। চেয়ার নিয়ে আসছি। হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়ে এক পার্শ্বে অপেক্ষায় রইলাম। বসে পড়লাম খাবার টেবিলে। বেশি খেতে পারলাম না। অল্পক্ষণ খেয়েই অন্য খাবারে মনোযোগ দিলাম। বলছিলাম, ইন্ডিয়ায় এক বন্ধুর বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা।
প্রথম খাবার ছিল কাবাব, সঙ্গে কুরমা বিরানী রুটি আরও পাঁচ ধরনের আইটেম গোশতের। দ্বিতীয় পর্বে নাম অজানা খাবার। তৃতীয় পর্বে বিভিন্ন প্রকার ফল-ফলাদি। চতুর্থ পর্বে ফালুদা, মিষ্টি, গাজরের হালুয়া। পঞ্চম পর্বে চটপটি, হালিম, চাটনী ইত্যাদি। ষষ্ঠ পর্বে কফি, চা, সঙ্গে নাম অজানা কিছু খাবার। সপ্তম পর্বে আইসক্রিম, দুধ আরও অনেক খাবার। কিছু খাবারের লিস্ট, এগুলো ছিল নজরে। এবার আসি কনেকে নিয়ে। এখানে মেয়ে পক্ষদের একদম লুটে নেয় বরপক্ষ। ঘরে সুই থেকে শুরু করে একদম গাড়ি পর্যন্ত। ছেলেকে দেওয়া লাগে অনেক টাকা সঙ্গে যাবতীয় আসবাবপত্র। প্রয়োজনীয় কিংবা অপ্রয়োজনীয়। দুটো মাইক্রো দেওয়া হয়েছে মেয়ে পক্ষ থেকে। তবে ছেলে পক্ষ থেকে তালাক দিলে মেয়ের ভরণপোষণ নিতে হয় অন্যত্র বিয়ে হওয়া পর্যন্ত। এবার জানুন অপচয়ের কথা। ৪ লাখ টাকা খাবারে ব্যয় করলে অপচয় করা হয় ২ লাখ। প্রচুর খাবার নষ্ট করা হয়। কারণ এখানে দেওয়ার মতো কেউই নেই। যে যেভাবে ইচ্ছা খেয়ে নেয়, যত ইচ্ছা তত। একদিকে খাবার রান্না হচ্ছে অপরদিকে খাবার নিচ্ছে সবাই, সরাসরি চুলা থেকেই। বারবার নিচ্ছে, খুব খাচ্ছে। আবার ফেলেও দিচ্ছে অনেক। খাবার পড়ে থাকে চতুর্দিক। যে যার মতো খাবারের উপর দিয়ে হেঁটে চলছে। আসুন, জেনে নিই জামাইবাবুর কীর্তি। নতুন শেরওয়ানি, মুখে জমকালো পর্দা। গলায় লক্ষ রুপির মালা। সঙ্গে থাকে পাহারাদার কয়েকজন। ঘর থেকে বের হয়ে জামাই নামাজ পড়েন পাশে কোনো এক মসজিদে। নিয়মটি দেখে খুব মুগ্ধ হলাম। আসেন ঘোড়া গাড়ি করে। গাড়ির চারপাশ ফুলে ভরা সৌন্দর্যময় প্রতীক। গেটে প্রবেশ পূর্ব রুপি বিলিয়ে দিন শতসহ¯্র। ভাগাভাগি করে সবাই সবার মতো করে। ধীরে ধীরে স্টেজে উঠে পড়েন জামাই। সবার দৃষ্টি কাড়েন তিনি। ছবি তোলায় ব্যস্ত থাকে প্রতিক্ষণ সবাই।সবশেষে বিয়ে সম্পন্ন হয়। ছেলে পক্ষ মেয়েকে আদর সোহাগ দিয়ে নিয়ে যান আপন ঘরে। প্রতিটি বিয়ে হয় এভাবে ঠিক ধুমধাম করে। খাওয়া-দাওয়ায় নেই বিন্দুমাত্র কমতি। যদিও অপচয় খুব। পরিশেষ দোয়া হয় উভয়ের দাম্পত্যজীবন সুখী হবার জন্য। আর এভাবেই সমাপ্তি ঘটে ইন্ডিয়ায় অদ্ভুত বিয়ে অনুষ্ঠান।
লেখক: কলামিস্ট/সম্পাদনা: আশিক রহমান