চিকুনগুনিয়ার আগ্রাসন, আতঙ্কে মানুষ
মো. ওসমান গণি
সারাদেশের মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যার সঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছে চিকুনগুনিয়ায়। বর্তমানে চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে ছড়িয়েছে। তা কোনো নতুন খবর না। এডিস মশাবাহিত এই রোগটি যে ইতোমধ্যে রাজধানীর সীমানা অতিক্রম করে দেশের আনাচে-কানাচে হানা দিতে শুরু করেছে সেই খবরও বাসি হয়ে গেছে। বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী দেখা যায়, নেত্রকোনার কলমাকান্দায়ও এখন চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। কমপক্ষে গত তিনমাস যাবৎ নানাভাবে এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করার সকল চেষ্টাই দৃশ্যত ব্যর্থ হওয়ার পর বিষয়টি এখন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবীর এ সংক্রান্ত একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রুল জারি করেছেন। জারিকৃত রুলে কেন স্প্রে ও যথাযথ ঔষধ ছিটানোর মাধ্যমে মশা ধ্বংস করা হইবে না, আক্রান্ত এলাকার ডাম্পিং স্পটগুলো কেন পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হইবে না এবং চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে জানানোর জন্য স্বাস্থ্যসচিব, এলজিআরডি সচিব, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিকুনগুনিয়া ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের মুখে নাগরিকদের অসহায়তার মাত্রা অনুধাবনের জন্য হাইকোর্টের এই রুলটিই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হতে পারে।
চরম হতাশার বিষয় হলো, আমাদের অত্যন্ত সফলভাবে ডেঙ্গু মোকাবিলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সকলেই জানেন, প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর বাহকও এই এডিস মশা। সেই এডিস মশাকে তখন যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, এবার পারলাম না কেন? চিকুনগুনিয়ার সূত্রপাত যেখানে সেই রাজধানীবাসী ক্রমাগত অভিযোগ করে আসছেন যে, মশার উৎপাতে তাদের পক্ষে দিনেও কাজকর্ম করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ বারবার আবেদন-নিবেদন সত্ত্বেও মশক নিধনের কোনো উদ্যোগ নেই। নাগরিকদের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন যে নেই তার দৃষ্টান্ত রাজধানী জুড়ে দৃশ্যমান। চিকুনগুনিয়া প্রায় মহামারী আকার ধারণ করা সত্ত্বেও মশক নিধনের দায়িত্ব যাদের সেই সিটি করপোরেশন প্রচার-প্রচারণাতেই যতটা সরব, আসল কাজে ঠিক ততটাই নিষ্প্রভ। দেশ যদি মশাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় তাহলে শত প্রচারণায়ও যেকোনো ফল হবে না তা অনুধাবন করার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বাংলাদেশ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক জরিপেই দেখা গেছে যে, রাজধানী ঢাকার প্রায় প্রতি ১১ জনের একজন চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত। তাদের মতে, গত এক দশকে চিকুনগুনিয়ার এমন প্রকোপ আর দেখা যায়নি। পরিস্থিতি যে পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে তাতে রাজধানীসহ আক্রান্ত এলাকাগুলোতে অনতিবিলম্বে সর্বাত্মক মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এটার জন্য যে ঔষধ ও যন্ত্রপাতি প্রয়োজন নিশ্চিত করতে হবে তাহার সরবরাহ। সাধারণত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোই এই দায়িত্ব পালন করে থাকে। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাদের একার পক্ষে তা সম্ভব না হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর বা দফতরসমূহের সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে। ইতোমধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আর কালক্ষেপণের কিংবা দায়িত্ব এড়াই যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের বিশ্বাস, সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মহলও এই ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান