হোটেল রেইনট্রিতে ২ তরুণী ধর্ষণ সাফাতসহ ৫ জনের বিচার শুরু
সাবিহা সুলতানা ও মামুন খান : রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণ মামলায় আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেছে ট্রাইব্যুনাল। চার্জগঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক সফিউল আজম আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জগঠনের আদেশ দেন। আসামি সাফাত আহমেদ এবং তার বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে আর সাফাতের বন্ধু সাদমান সাকিফ, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে চার্জগঠন করা হয়েছে। শুনানির সময় কারাগারে থাকা ওই সব আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত চার্জগঠনের আদেশ দিলে সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর চার্জ পড়ে শোনানোর পর তারা দোষী না নির্দোষ জিজ্ঞাসা করলে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এরপর আদালত আগামী ২৪ জুলাই সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেন।
এদিকে চার্জগঠনের পর আসামিদের জামিনের প্রার্থনা করে শুনানি করা হলে বিচারক তা নাকচ করেন। আসামি নাঈম আশরাফের পক্ষে তার আইনজীবী খায়রুল ইসলাম (লিটন) বলেন, তার বিরুদ্ধে বাদী এজাহারে অভিযোগ আনেননি। এটা একটা সাজানো মামলা। আর মেডিকেল রিপোর্ট বলছে, ধর্ষণ হয়নি। নাঈম আশরাফের বিরুদ্ধে ধর্ষণের কোনো উপাদান না থাকায় তার অব্যাহতির প্রার্থনা করেন তিনি।
সাফাত আহমেদ, তার দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনের পক্ষে কাজী নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, আমাদের দেশে ধর্ষণের ঘটনা আছে। আবার অনেকে সাজানো মামলা করে। আর এটাও একটা সাজানো মামলা। কারণ ঘটনা ঘটেছে ২৮ মার্চ আর বিলম্ব করে মামলা করা হয়েছে তা একমাস ৮ দিন পর। সাফাতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের উপাদান নেই।
১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয়ে তিনি বলেন, আসামিদের ১৬৪ আছে। আমাদের দেশে কীভাবে ১৬৪ নেয়, আমরা ভালোভাবে জানি। হয় ১৬৪ কর আর না হয় ক্রশফায়ারের হুমকি দেওয়া হয়। আর আমরা ১৬৪ প্রত্যাহার করেছি। সাফাতের বিরুদ্ধে ৯ (১) এর কোনো অভিযোগ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই তাকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। আর বিল্লাহ ও রহমত আলীর বিষয়ে তিনি বলেন, তারা সাফাতের স্টাফ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা ভিডিও করেছিল। তাহলে সেই ভিডিও কোথায়? এদের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তা করার কোনো ধরনের উপাদান না থাকায় তাদেরকে অব্যাহতির আবেদন করেন কাজী নজিবুল্লাহ হিরু।
আসামি সাদমান সাকিফের আইনজীবী আব্দুর রহমান হাওলাদার বলেন, ঘটনার দিন রাতে সাদমান সাকিফ দিল্লি থেকে এয়ারপোর্ট আসে। তখন তাকে ফোন করা হয় সেখানে যাওয়ার জন্য। সে সেখানে গিয়ে পরিবেশ ভালো না দেখে চলে আসে। পরবর্তীতে তাকে আবারও ফোন করে সেখানে যেতে বলা হয়। সেখানে গেলে নাঈম আশরাফ তাকে মারধর করে বের করে দেয়। সাফাত, নাঈম আশরাফ বা অন্য কাউকে ধর্ষণে প্ররোচিত করেছেন তার বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ নেই। এজন্য আমি তার অব্যাহতির প্রার্থনা জানাচ্ছি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী আকবর এবং জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে ফাহমিদা আক্তার রিংকি অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জগঠনের আদেশ দেন।
এর আগে গত ৭ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে আসামি সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে। অপর আসামি সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসনের বিরুদ্ধে ওই আইনের ৩০ ধারায় ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ করা হয়েছে। মামলার ৫ আসামিই বর্তমানে কারাগারে আছেন। আসামিদের মধ্যে রহমত আলী ছাড়া অপর আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ