বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে ইইউর শর্ত গ্রহণযোগ্য নয়
ইউরোপের দেশগুলোতে যে সমস্ত বাংলাদেশি অবৈধ পথে গিয়ে বর্তমানে বসবাস করছে তাদের ফিরিয়ে আনতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেসব শর্ত দিয়েছে তা আসলে গ্রহণযোগ্য নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা পশ্চিমা বিশ্ব হঠাৎ করে অভিবাসীদের বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে যাচ্ছে, এটা এখন দৃশ্যমান। তাদের সমাজে অভিবাসীরা একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অভিবাসীরা কোন পথে গিয়ে তাদের ওখানে অবস্থান বা বসবাস করছে তা আসলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না।
আমি মনে করি, বাংলাদেশকে এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। কারণ শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ থেকে যারা যাচ্ছে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই সিদ্ধান্তের ফলে। এখন বাংলাদেশকে দুটি বিষয় নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে হবে। এক. ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিকভাবে এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে হবে। আবার যে সমস্ত দেশ থেকে অভিবাসীরা যাচ্ছেÑ যেমন ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে যারাই ইউরোপের দেশগুলোতে যাচ্ছে, তাদের সঙ্গেও এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ আলোচনা দরকার। আন্তর্জাতিক অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি নিয়ে যা ইচ্ছে তা করা যায় না।
বর্তমান বিশ্ব সভ্যতা বা বিশ্ব অর্থনীতির যে বিকাশ এটার পেছনে অভিবাসীদের একটা বিরাট অবদান রয়েছে। শুধু ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিছে বা কষ্ট করে অনিয়মিতভাবে পৌঁছে গেছে বলে তাদের ফেরত পাঠানো হবে তা সঠিক নয়। অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে হলে অবশ্যই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তারা নিজেরাও জানে, অভিবাসী নিয়ে তাদের সমাজ এখন বিভক্ত। তাদের দেশে এখন যে সবস্ত অভিবাসন বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যারা অভিবাসন চায় না তাদের দাবির প্রেক্ষিতে যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন সায় দেয় তাহলে বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির জন্য হুমকি হবে। ওখানকার অনেকেই এ বিষয়টা বুুঝেনও। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর উচিত হবে ওখানকার যে সমস্ত সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন রয়েছে তাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ রক্ষা করা। এখানে একধরনের নন স্টেট ডিপলোমেসির বিষয় আছে, তা আমাদের ব্যবহার করতে হবে যেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর তাদের ভেতর থেকেই একটা চাপ তৈরি হয়। যে সমস্ত এনজিও বা অভিবাসী নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
এখানে কৌশলে বাংলাদেশকে এগোতে হবে। ডিল করতে হবে। আর ইইউর সঙ্গে একটা অনমনীয় বা কঠোর অবস্থান নিয়ে কাজ করতে হবে। অভিবাসী নিয়ে নতুন শর্ত হঠাৎ করে চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই তাদের। কারণ যারা ওই সবদেশে যাচ্ছে, তারা ইউরোপের একটা নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগসাজসের মাধ্যমেই যাচ্ছে। যারা পৌঁছে গেছে বা সেখানে যারা অবস্থান করছে তাদের প্রতি মানবিক বা অতীতে যে ধরনের আচরণ দেখানো হয়েছে তা দেখাতে হবে। হঠাৎ করে তাদের প্রতি এ ধরনের অমানবিক আচরণ করার সুযোগ নেই। কেননা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা বড় ধরণের চাপ পড়বে যদি তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এটা সমস্যার সমাধান নয়, সমাধানের পথ আমাদের খুঁজতে হবে। আমার মতে, যেসব নেটওয়ার্ক এসব কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। নেটওয়ার্কগুলো ভেঙে দিতে হবে।
পরিচিতি: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন/সম্পাদনা: আশিক রহমান