রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে ভারতীয় প্রভাব কতটুকু?
এ্যাড. তৈমূর আলম খন্দকার
আগের মতো এখন আর রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে বা রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় না। কারণ যুদ্ধ এখন ব্যয়বহুল যা রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। ফলে ভূ-খ- দখলের চেয়ে নিজস্ব বাজার সৃষ্টি অর্থাৎ অর্থনৈতিকভাবে দখলটা অনেক গুরুত্ব পাচ্ছে। অন্যদিকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনই এখন প্রাধান্য। একটি জাতিকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য সাংস্কৃতিকভাবে আঘাত হানাই যথেষ্ট।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অনেক গুম, খুন, অপহরণ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে থাকে। এখন নতুন করে ‘ধর্ষণ ও পরকীয়া’ সমাজ জীবনে মহামারি আকার ধারণ করেছে। প্রতিনিয়তই দেখা যাচ্ছে, জন্মদিন পালনের দাওয়াতে এসে ধর্ষিত হচ্ছে। আগে আলোচনা হতো কার কন্যাকে কে বিয়ে করছে। এখন কার স্ত্রী কার সঙ্গে পরকীয়ার টানে চলে গেছে, এ নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। দিনে দিনে এ ধরনের সংবাদের প্রসার লাভ করছে। সার্বিক দিক পর্যালোচনা করলে এটাই প্রকাশ পায় যে, আমাদের সমাজব্যবস্থা পশ্চিমা ধর্মহীন সংস্কৃতির দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে।
পত্রিকার পাতা খুললেই অবাধ যৌনাচার তথা বিবাহ বন্ধন বহির্ভূত ঘটনা দিনদিন মহামারি আকার প্রসার হচ্ছে, যা ভারতীয় টিভি সিরিয়ালে দেখা যায়। পত্রিকান্তরে এটাও প্রকাশ পাচ্ছে যে, ভারতীয় সিরিয়ালের প্রতি দেশের নারী ও যুবসমাজ ঝুঁকে পড়েছে এবং এ সিরিয়াল দেখতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অনেক স্বামী-স্ত্রীর সংসার ভেঙে গেছে। এসব সংবাদের প্রতি সরকারের দৃষ্টি কি আকৃষ্ট হয় না? ভারতে বহুবার গিয়েছি। সেখানে হোটেলে বসে বাংলাদেশের সংবাদ বা নাটক দেখার জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। কারণ ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের চ্যানেল দেখানো হয় না। মাদকের সরবরাহ এখন কোথা থেকে হচ্ছে তা কি সরকার খতিয়ে দেখছে? কথা বললে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়? তার চেয়ে বড় বিষয় বন্ধুত্বের জন্য জাতীয় স্বার্থ আমরা কতটুকু জলাঞ্জলি দিতে পারি?
ভারতীয় রাষ্ট্রীয় নীতি বাংলাদেশের স্বনির্ভরতার অনুকূলে নয়। বরং ভারতীয় কালচারকে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তারা বেশি আগ্রহী। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও তারা মাথা ঘামান একটু বেশি। বর্তমান সরকারও মনে করে, ভারত খুশি তো পৃথিবী খুশি! এমতাবস্থায়, যেকোনো অবস্থান বা যেকোনো সেক্রিফাইসের (ঝধপৎরভরপব) এর মধ্যে হলেও ভারতকে খুশি রাখা অত্যন্ত জরুরি বলে কলকাতা মনস্ক বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন।
লেখক: কলামিস্ট ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা