অপচিকিৎসা থেকে কেন আমরা দূরে থাকব?
ডা. মো. তাজুল ইসলাম
অপুষ্টিতে শিশুরা ‘ঝাড়-ফুঁকই’ চিকিৎসাÑ উক্ত শিরোনামে দেশের একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকে লেখা হয় চট্টগ্রামের সীতাকু-ের সোনাইছড়ির ত্রিপুরা পাড়ার ৫১ শিশু অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, ৯ জন শিশু মারা যায়। রোগাক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা এ শিশুদের চিকিৎসা করেন ঝাড়ফুঁক দিয়ে। কেউ অসুস্থ হলে তারা কবিরাজের কাছে নিয়ে যান, যেখানে তাবিজ-কবজ দিয়ে তাদের চিকিৎসা করানো হয়। অভিভাবকরা জানান, রোগমুক্তির জন্য তারা তাবিজ-কবজে বিশ্বাস করেন। অথচ এ শিশুরা দীর্ঘদিনের অপুষ্টিতে ভোগার কারণে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে সহজেই তারা রোগাক্রান্ত হচ্ছে। তাদের মধ্যে জ্বর, কাশি, লালচে গোটাসহ নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। ঢাকা থেকে রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর একটি বিশেষজ্ঞ দলকে এর জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়, অচিরেই এ রোগের কারণ, ধরন সবই জানা যাবে। কিন্তু এই অসহায় শিশুদেরসহ সকল রোগের চিকিৎসায় তারা ঝাড়ফুঁক, তাবিজ-কবজের উপর নির্ভর করেন এ সংবাদ আমাদের আতঙ্কিত করে।
আমাদের দেশে প্রায় সব ধরনের মানসিক রোগকে জিন-ভূত; আলগা বাতাস লাগা কিংবা তাবিজ-কবজে আক্রান্ত বলে মনে করা হয়। এসব রোগীদের ওই জিন-ভূত তাড়ানোর নামে যে চিকিৎসা দেওয়া হয় তা খুবই নিষ্ঠুর প্রকৃতির হয়ে থাকে। পানিতে চুবানো, হাতে বেত্রাঘাত, নাকে, কানে গরম তেল ঢেলে দেওয়া, আগুনের ধোঁয়া নাকে মুখে চেপে ধরে দেওয়াসহ নানাবিধ কষ্টকর চিকিৎসা দেওয়া হয়। এতে অনেকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়, শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের কষ্টের কথা না নাই বললাম। এ রকম অপচিকিৎসা থেকে জনগণকে মুক্ত করতে হলে তাদের কাছে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও সঠিক চিকিৎসা কি ও কোথায় তা জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
অনেক জিন হুজুর বর্তমানে নিজেরাই আমাদের (মনোরোগ বিশেষজ্ঞ) কাছে এ ধরনের রোগী পাঠিয়ে থাকেন। কেননা অভিজ্ঞতায় তারা দেখেছেন, বেশিরভাগ রোগী তারা ভালো করতে পারেন না। তারা রোগীর অভিভাবকদের বলেন আমি বদ জিন তাড়িয়ে দিয়েছি। কিছু সমস্যা রয়ে গেছে এর জন্য ব্রেনের ডাক্তার দেখান এভাবে জিন-ভূত, তাবিজের ব্যাপারটিকে তারা ঠিকই জিইয়ে রাখেন। সাধারণ মানুষকে এই অজ্ঞতা থেকে মুক্ত করতে হবে। প্রচার মাধ্যমের রয়েছে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
লেখক: অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
সম্পাদনা: আশিক রহমান