হাত মিলিয়েও কাছে আসতে পারল না ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র
লিহান লিমা : ফ্রান্স সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে ‘অটুট বন্ধুত্ব’ ও ‘কৌশলগত মিত্র’ বুলি উচ্চারণ করছিলেন, তখনই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে তার মতানৈক্য চলছিল। সিনহুয়া নিউজ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংকটকালীন সময়ে তৃতীয়বারের মতো ইউরোপ সফর করেছেন ট্রাম্প। রাশিয়ার আইনজীবীর সঙ্গে বৈঠকের জের ধরে সিনেটের তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন বড় ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র। অপরদিকে জি-২০ সম্মেলনের পর ইউরোপের সঙ্গে বরফশীতল সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের। তবে এই মহাদেশে পরিবর্তন দেখার পরও ইউরোপ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাস্তবতা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।
বেলজিয়ামের অ্যান্টউর্ইপ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডক্টর ডেভিড ক্লার্কমেন বলেন, ক্ষমতা গ্রহণের ৬ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর ট্রাম্প ধীরে ধীরে ভৌগোলিক মিত্র এবং ইউরোপ সম্পর্কে সচেতন হবেন। ট্রাম্প তখন ইউরোপের সঙ্গে দৃঢ় সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এবং ইইউভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে অত্যাধিক ইস্যুতে কাজ করার গুরুত্ব উপলদ্ধি করবেন।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নীতিগত অবস্থানের কিছু জায়গা ইউরোপীয় সরকারপ্রধান এবং নাগরিকদের পুরোপুরি স্বার্থবিরোধী।’
ক্লার্কমেন বলেন, ‘ট্রাম্প যদি জলবায়ু চুক্তি ও কয়েলের মতো পুরাতন শিল্প কারখানার পক্ষে সংকল্পবদ্ধ থাকেন তাহলে উত্তেজনা চলতেই থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র যদি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কোনো আগ্রহ না থাকে তাহলে ইউরোপ অন্যদিকে দৃষ্টি দিবে। প্যারিস চুক্তির মতো বৈশ্বিক ইস্যুগুলোতে বর্তমানে চীন ইইউর ঘনিষ্ঠ অংশীদার। প্রেসিডেন্টের নীতির কারণে ইইউভুক্ত দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কাজ কমিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
সিনহুয়া নিউজের খবরে বলা হয়, বর্তমানে ইউরোপসহ আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে অনুপস্থিতি, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু থেকে দূরে সরে যাওয়া এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য নিয়ে ছলাকলার কারণে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান ও প্রভাব হারাচ্ছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বিশ্বসহ ঘরের মাঠেও সমালোচিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউরোপীয় কমিটির সাবেক মহাসচিব গার্হাড স্টিল বলেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি ইইউ নীতির পুরোপুরি বিপরীত, এটি মুক্ত বাজারেরও বিরোধী। নব্য আমেরিকান নীতি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও বৈশ্বিক আদেশকে সমর্থন করে না, অন্যদিকে ইইউ তা সমর্থন করে।’ স্টিল বলেন, ‘ট্রাম্পের ফ্রান্স সফরে প্রত্যাশা খুব কমই ছিল এবং ফলাফলের আশাও কেউ করেনি কারণ প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ স্পষ্টভাবে ইইউ নীতিকে সমর্থন জানিয়েছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রে জার্মান মারশাল ফান্ডের নির্বাহী আলেক্সজান্দ্রা দি হোপ স্কেফার বলেন, ভবিষ্যতে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কি হবে তা বলা যাচ্ছে না। কিন্তু একটা জিনিস নিশ্চিত যে সাধারণ বিষয়গুলো একে অন্যের সাংঘর্ষিক হবে না। তবে একটি বিষয়ে পারস্পরিক সহাবস্থান কখনোই স্থিতিশীল সম্পর্কের জন্য যথেষ্ট নয়। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ