নির্বাচনে যাওয়া না-যাওয়ার টানাপড়েনে ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি
বিশ্বজিৎ দত্ত : মাত্র দেড় বছর পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারি আগের নির্বাচনে অংশই নেয়নি বিএনপি। এরপরে সরকার পতনের লক্ষ্যে বিএনপি রাজপথে সহিংস আন্দোলনও করেছে। এতে বিএনপির শক্তিক্ষয় ছাড়া তেমন কোনো লাভ হয়নি। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দলটি। জিতেও যায় কয়েকটিতে। এর মাধ্যমে নির্বাচনি ধারায় ফিরে আসতে শুরু করে বিএনপি। পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করে তারা। দলের এই ফিরে আসাকে সেই সময় স্বাগত জানান, অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদসহ বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীরা।
গত রোজার ইফতারে ধানের শীষের জন্য ভোট চাইলেন খালেদা জিয়া। মাত্র ১ মাসের ব্যবধানে লন্ডন যাবার আগে বলে দিলেন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচন হলে তারা অংশগ্রহণ করবেন না।
নেত্রীর এই হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলকে অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় বলছেন, এটা সিদ্ধান্ত বদল নয়। আমরা আগেও বলেছি শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। সুষ্ঠু পরিবেশ হলেই নির্বাচনে যাব। আর শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে গেলেও আমি অন্তত নির্বাচন করব না। কারণ এই সরকারের পুলিশি নিয়ন্ত্রণের নির্বাচনে গিয়ে দল হারলেও দলের ক্ষতি হবে। অন্যদিকে লাভবান হবে আওয়ামী লীগ। তারা বিশ্বের কাছে নিজেদের জাহির করবে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্র্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সবসময়ই নির্বাচনে যেতে চেয়েছি। কিন্তু তার আগে নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দলের চেয়ারপারসন যে কথা বলেছেন তা যথার্থই বলেছেন। কারণ শেখ হাসিনা নিউট্রাল নন। তবে নিরপেক্ষ প্রশাসন হলে আমরা ন্যাশনাল ইলেকশনে যাব।
নেতৃবৃন্দ যে কথাই বলুক সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্যই যে খালেদার এই বক্তব্য সে বিষয়ে নিশ্চিত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তাদের মতে, এর মাধ্যমে বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে কিছুটা অনিশ্চয়তায় রাখাও বিএনপির কৌশল মনে করছেন অনেকেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. মাহবুবুর রহমান বলেন, রাজনীতিতে কৌশল তো থাকবেই। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে হোক এটা তো আমরা কেন দেশের সকল জনগণই চাইবে। এমনকি বিদেশিরাও চাইবে।
উল্লেখ্য, বিএনপির সাম্প্রতিক কার্যক্রমেও দেখা যায় বিএনপি আসলে ভোটের জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভোটে নামার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই সংগঠন গোছাচ্ছে খালেদা জিয়ার দল। জেলা স্তরেও নানা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া সডক অবরোধ, ‘জ্বালাও-পোডাও’ ধরনের জঙ্গি কর্মসূচি নিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্ব। এতে একদিকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যেমন তাদের দূরত্ব বেড়েছে, তেমনই রাষ্ট্রের সম্পত্তি ধ্বংস, নাশকতার মতো মামলায় জেলে যেতে হয়েছে বিএনপির বহু নেতাকে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে নির্বাচন করার যে শর্ত বিএনপি দিয়েছিল সেটাও দেশে-বিদেশে জনপ্রিয় হয়নি। কারণ পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশে রাষ্ট্রপ্রধানকে ক্ষমতায় রেখেই নির্বাচন হয়।
সব মিলিয়ে, ভোট বয়কটের পথে হাঁটলে দল অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বে বলে মনে করছেন অনেক নেতাকর্মীরাই। যদিও গয়েশ্বর রায় বলছেন, এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে গেলেও দল সংকটে পড়বে। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু