‘সমন্বিত ও পরিকল্পিত কার্যক্রম ছাড়া রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব না’
আরিফুর রহমান তুহিন : জলবদ্ধতার সাথে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে সমন্বয় করে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব না বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অন্যদিকে মেয়রের দাবি, নগরীর জলাবদ্ধতার জন্য সিটি কর্পোরেশনের কোনো দায় নেই। ওয়াসা তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে। তাই নগরীতে এমন জলাবদ্ধতা।
গতকাল রবিবার রাজধানীতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃক আয়োজিত ‘নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় সভা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তারা এসব বলেন।
মোশাররফ হোসেন বলেন, ওয়াসার এমডি বলছে তাদের মাস্টার প্ল্যান আছে। অথচ সেগুলো সেকেলে। বর্তমানে ঢাকা সিটির আয়তন কয়েকগুণ বেড়েছে। আগের মাস্টার প্ল্যান ধারা কিভাবে জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব হবে। কাজেই আপনাকে (মেয়র আনিসুল হক) নতুন করে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে হবে। তিনি মেয়র এবং ওয়াসার এমডিকে ৫০-৬০ দশকের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, দেশে তখন মুষলধারে বৃষ্টি হলেও ঢাকায় এক ফোটা বৃষ্টি হতো না। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি। এভাবে আর কিছুদিন গেলে আমাদের সাঁতার কাটতে হবে। তাই আপনারা একটা সঠিক প্ল্যান গ্রহণ করুন। টাকা লাগলে প্ল্যানিং মন্ত্রণালয় বা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। ভালো হই আর খারাপ হই আমি তো আপনাদের মন্ত্রী।
ঢাকা শহরের খাল ভাড়াটের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, খালগুলো শুধুমাত্র মাটি দিয়ে ভরেনি। এর সাথে আমরা নগরবাসীও দায়ী। তারা সেফটি ট্যাংকি ব্যাবহার করে না। ফলে ময়লাগুলো ড্রেন হয়ে খালে পড়ে খাল ভরাট হচ্ছে। জনগণকেও এজন্য সচেতন হতে হবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘খালের আবর্জনা পরিষ্কার করা কোনো ব্যাপার নয়। দ্রুতই এ কাজ করা উচিত। একইসঙ্গে ঢাকা শহরের সব মানুষের মল-মূত্র স্যুয়ারেজ সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া উচিত। এছাড়া নদীগুলোর নাব্যতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী নিয়োগ করে যত অবৈধ স্থাপনা আছে, সব ভেঙে দিতে হবে। আমার বাড়ি থাকলে তাও ভেঙে দিতে হবে’।
পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘নিকুঞ্জের জলজট সমস্যা সমাধানে আমি নিজে ওই স্থান পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। ওখানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্লুইচ গেট আছে। সেটাকে বড় করার ব্যবস্থাও নেওয়া হবে’। তিনি আরও বলেন, ‘খালগুলোকে দখলমুক্ত করতে না পারলে জলাবদ্ধতা দূর করার কোনো প্ল্যানই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক বলেন, খাল রক্ষণাবেক্ষণের পুরো ক্ষমতা সিটি কর্পোরেশনকে দিতে হবে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে এর বিকল্প নেই। তবে যেহেতু এটা একটা প্রক্রিয়া তাই এর আগেই খালগুলো পরিষ্কার করা দরকার। এ সময় ওয়াসার এমডি তাসকিম এ খান বলেন, ‘আমার বাচ্চা আপনি নেন’। জবাবে মেয়র বলেন, ‘আপনার বাচ্চা তো রোগী। বিকালঙ্গ সন্তান নিয়ে আমি কি করব। আগে একে সুস্থ করুণ, তারপরে আমাকে দেন।’ তখন এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, আগে বাচ্চা গ্রহণ করুন। একে সুস্থ করার দায়িত্ব আমার।
আগামী বর্ষার আগেই কুড়িল ফ্লাইওভার এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করা হবে জানিয়ে মেয়র আনিসুল হক বলেন, নিশ্চয়তা যখন পেয়েছি যেকোনো মূল্যে যথাসম্ভব খালগুলো পরিষ্কার রাখা হবে। বনানী-গুলশান এলাকার লেক ২ একদিনের মধ্যেই পরিষ্কার করা হবে। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি