চিকুনগুনিয়ার দায়দায়িত্ব না নেওয়া আদালত অবমাননার সামিল
শাকিল আহমেদ: চিকুনগুনিয়ার দায়-দায়িত্ব না নিয়ে একে অন্যের উপর দোষ চাপানো আদালত অবমাননার শামিল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনর সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন চিকুন গুনিয়া মহামারির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি ও আমাদের করণীয় শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, চিকুনগুনিয়া ঢাকা শহর সহ সারাদেশে মহামারির ন্যায় ছড়িয়ে পরেছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না মর্মে আদালতে রুল জারির পরও স্বাস্থ মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশন একে অন্যের উপর দায় চাপানো আদালত অবমাননার শামিল। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে অজ্ঞাত রোগে জ্বর শুরু হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ বলেন এক প্রকার এডিস মশার কামড়ে এই জ্বর হচ্ছে। কিছু দিন মশা নিধনের কার্যক্রম চলে আবার বন্ধ হয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে আজ এই এডিস মশাই ভয়াবহ আকারে চিকুনগুনীয়া মহামারী আকারে আমাদের মাঝে আবির্ভূত হয়েছে। তাই সিটি কর্পোরেশন কোন ভাবেই দায় এড়াতে পারে না। ড্রেন, ডোবা নালা, খাল, রাস্তা-ঘাট পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, সিটি কর্পোরেশন গুলোতে মশা মারার জন্য ফগার মেশিন যে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয় তা একেবারেই অপর্যাপ্ত এবং অকার্যকর ক্যামিকেল। ঔষধ প্রয়োগের পর ঐ জায়গায় কিছুক্ষন পরেই আবার মশার উপদ্রপ শুরু হয়। এর মূল কারণ হচ্ছে মশার ক্যামিকেল রেজিষ্ট্যান্স হয়ে যাওয়া। সিটি কর্পোরেশন এই সকল মশার ক্যামিকেল নিয়ে নতুন করে কোন পরিকল্পনা না থাকায় রেজিষ্ট্যান্স হওয়া ক্যামিকেল ছিটানো লোক দেখানো ও অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই না বলে জানান তিনি। ক্যামিকেল রেজিষ্ট্যান্স হওয়ার জন্য মশার কয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেন তিনি। পরিবেশ নষ্ট, ডোবা-নালা ও জলাধারে প্রবাহ না থাকা উচ্চ মাত্রার কীটনাশক জমিতে প্রয়োগ ফলেই মশাদের শরীরে দিনে দিনে ক্যামিকেল সহ্য ক্ষমতা বেড়েছে। ফলে তারা নানা রোগে ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন নামে আমাদেরকে আক্রান্ত করছে। কখনো ম্যালেরিয়া কখনো ডেঙ্গু, আবার বর্তমানে চিকুনগুনীয়া নামে আক্রান্ত করে যাচ্ছে। সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বালাই নাশক বিভাগই হচ্ছে এর প্রথম নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আরেক পর্যায়ে দায়িত্ব রোগতত্ত্ব বিভাগের, বিএসটিআই এর ভুমিকা এখানে নামমাত্র কারণ উপরের দুই বিভাগের ছাড়পত্র ছাড়া বিএসটিআই অনুমোদন দিতে পারেনা। এই সকল নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে বেশীরভাগ লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে দূর্নীতির মাধ্যমে।
তাদের কোন প্রকার নজরদারী না থাকায় মশার কয়েল উৎপাদনকারী বেশীরভাগ বৈধ অবৈধ প্রতিষ্ঠানসমুহ গ্রাহকদের নজর কাড়ার জন্য উচ্চমাত্রার বা অনুমোদন ছাড়া ভিন্ন মাত্রার নকডাউন কীটনাশক ব্যবহার করে বাজারজাত করে আসছে। আর এই সকল ক্যামিকেল মশা গ্রহণ করতে করতে তারা কেমিকেল রেজিষ্ট্যান্স হয়ে গেছে। কৃষি জমিতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। যদিও এ সকল উৎপাদনকারী অল্প সময়ের মধ্যে আজ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এদের সহায়তা করছে আরেক শ্রেণীর আমদানীকারক যারা উৎপাদনের নামে লাইসেন্স গ্রহণ করে বাজারে বিভিন্ন ক্যামিকেল বিক্রয় করে আসছে। ফলে সরকার বা সিটি কর্পোরেশন যে ক্যামিকেল ছিটায় তা দ্বারা মশা মরা তো দুরের কথা ডিম্বাশয়ও ধ্বংস করা যাচ্ছে না। এসময় তারা কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন, সারা দেশে মশা নিধনের জন্য পূর্বের ন্যায় হেলথ ইন্সপেক্টর নিয়োগ করতে হবে। ঢাকাসহ সারা দেশে সকল জলাধার পরিস্কার করে জলপ্রবাহ ঠিক রাখতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে সঠিক নজরদারী ও দূর্নীতিমুক্ত করতে হবে। ক্যামিকেল খুচরা বাজারে বিক্রয় বন্ধ করতে হবে। যে সকল অবৈধ উৎপাদনকারী অবৈধভাবে উৎপাদন করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে চিকনগুনীয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা করতে হবে। মশার ধরণের সাথে সাথে নতুন নতুন ক্যামিকেল আবিস্কার বা আমদানী করে সুষ্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। সারা দেশে হাসপাতাল সমুহকে বিশেষ ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করতে হবে। জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সকল হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সারা দেশে মশার কয়েল ও কীটনাশক কারখানাসমুহকে একসাথে করে একটি আলাদা পেষ্টিসাইড শিল্পঅঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, কৃষিবিদ ইন্সটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. আলাউদ্দিন পিকে, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির হিরু, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি হারুন অর রশিদ খান, কর্মসংস্থান আন্দোলনের সভাপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই।