‘আমরা নিজেদের গৃহকর্মীদের অধিকারের দিকে তাকাই না’
তানভীর আহমেদ : শ্রমিক অধিকারের কথা বললেও আমরা নিজেদের গৃহকর্মীদের অধিকারের দিকে তাকাই না। সকলকে শ্রম আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। গতকাল সোমবার ডেইলি স্টার ভবনে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএএফ) আয়োজিত ‘এসডিজির আলোকে শিশু শ্রম নিরসনে চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক
গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা অনেকে গৃহকর্মীদের দিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করাই। যা মোটেই উচিত নয়। হালকা ও ভারি কাজ নিয়ে লেবার আইনে নির্দিষ্ট করা নেই বলে আমরা ভারি কাজকে হালকা কাজ বলে আমাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য শ্রশিকদের দিয়ে সে কাজগুলো করিয়ে নেই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে শিশুশ্রম আছে এবং তা নিরূপণ করতে হবে। শিশু আইন এবং শ্রম আইনে কিছু পার্থক্য রয়েছে। শিশু আইনে ১৮ বছর পর্যন্ত শিশু বলা হয়। শ্রম আইনে ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়স্কদের কিশোর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেখানে বলা আছে তারা হালকা কাজ করতে পারবে। এছাড়া বর্তমানে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হতে চলেছি। আমাদের শিশুরা যদি ঝুকিপূর্ণ কাজ করে তবে তা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। শিশুশ্রম নিরসনে জেলা- উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হবে। এই সমস্যা নিরসনে খুব শিগগিরই লেবার অ্যাক্ট অ্যামান্ডমেন্ট করা হবে। শিশুশ্রম পুরোপুরিভাবে নিরসনের জন্য ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা লাগবে। ২০২১ সালকে সামনে রেখে একটি কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কমিয়ে এনে ২০২৫ সালের মধ্যে সকল ধরনের শিশুশ্রম নির্মূল করা হবে। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নুরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে ২০১২ সালে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। তাতে ২০১৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম বন্ধ করা হবে বলা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্ভব না হওয়ায় এক বছর সময় বাড়ানো হয়। তারপরও তা কার্যকর হয়নি।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের উপস্থাপিত গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের জানুযায়ি পর্যন্ত ৬৫টি শিশু গৃহকর্মীকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। একই সময় ২১ জন শিশু গৃহকর্মীকে ধর্ষণ ও ২১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ৩০ জন শিশু গৃহকর্মী আত্মহত্যা করে। যা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে এসেছে। ২০১৫ সালে ৯০টি শিশুকে এবং ২০১৬ সালে ১০৬টি শিশুকে চুরির অপবাদে নির্মমভাবে পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই দরিদ্র শ্রমজীবী শিশু। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ