সরকারি টিকা জোটেনি, ব্যর্থতা স্বীকার করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর সীতাকু-ে ৯ শিশুর মৃত্যু ‘হামে’
রিকু আমির : হাম ও মারাত্মক অপুষ্টির প্রভাবে চট্টগ্রামের সীতাকু-ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ৯ শিশুর মৃত্যু ঘটেছে বলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্র (আইইডিসিআর) জানতে পেরেছে। গতকাল সোমবার বিকালে আইইডিসিআর মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।
সরকার পরিচালিত বিনামূল্যে হামের প্রতিষেধক প্রদান আওতার বাইরে ছিল এসব শিশু। ওই অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের সব শিশুও এর বাইরে। এই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিদফতর দুঃখও প্রকাশ করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশের টিকাদান কর্মসূচি পরিচালিত হয় প্রতি ইউনিয়নের অধীনস্থ ওয়ার্ড ভিত্তিক মাইক্রোপ্ল্যান অনুযায়ী। সীতাকু- উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মাইক্রোপ্ল্যানে ত্রিপুরাপাড়ার উল্লেখ নেই। এ কারণেই ত্রিপুরাপাড়ার টিকাদান কার্যক্রম ছিল না। এই দায় ১০ বছর আগে যারা স্বাস্থ্য অধিদফতরে ছিল তাদেরও, এক বছর আগে যারা ছিল, তাদেরও।
এসময় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, শুধু ত্রিপুরাপাড়াই নয়, আরও কিছু পাড়া আছে মাইক্রোপ্ল্যানে নেই। ওই ঘটনার দায় স্বীকার করছি, আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি, ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, সেই সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা স্বেচ্ছায় আধুনিক চিকিৎসা বিমুখ। একইসঙ্গে আধুনিক জীবনযাত্রা, সরকারি প্রশাসন থেকেও তারা দূরে থাকার চেষ্টা করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইইডিসিআর চট্টগ্রামের সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থাবস্থায় ভর্তি শিশুদের রক্ত ও লালা সংগ্রহ করে। একইসঙ্গে ত্রিপুরাপাড়ায় গিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। রক্ত ও লালা আইইডিসিআর ল্যাবরেটরি ও জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের জাতীয় পোলিও-মিজলস ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয় আক্রান্ত ও মৃত শিশুরা হাম রোগের জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত ছিল এবং তারা মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত ছিল। এই অপুষ্টির জন্য সংক্রমণ একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে ছড়িয়ে পড়েছিল।
আবুল কালাম আজাদ জানান, ত্রিপুরাপাড়ায় মোট বাড়ির সংখ্যা ৮৫টি, মোট জনসংখ্যা ৩৮৮। এর মধ্যে হাম সন্দেহ করা হয়েছিল ৯০ জনের। মোট জনসংখ্যা ৩৮৮ জনের কেউ-ই হামের টিকা পাননি।
বর্তমানে চিকিৎসাধীন প্রায় ৯০ জনের সুচিকিৎসা চলছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ওই এলাকার বাসিন্দা বীরেন্দ্র ত্রিপুরার বাড়িতে অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেখানে পুষ্টি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনÑ আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক সানিয়া তাহমিনা প্রমুখ। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী