বার্ধক্যে নিঃসঙ্গতা আর কত
সৈয়দ রশিদ আলম
হুমায়ূন আহমেদের একটি উপন্যাসের নাম একা একা, এই উপন্যাসটি পড়ে একাকিত্বর যন্ত্রণা কিছুটা উপলব্ধি করা যায়। ভালবাসার মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণার কথা উপন্যাসে বলা হয়েছিল। গত বারো বছর থেকে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ফাদারস ডে, মাদারস ডে পালিত হচ্ছে। ইউরোপ অমেরিকার বাসিন্দারা বছরে একটি দিন ফাদারস ডে ও মাদারস ডে পালন করে থাকেন। তাদের মাতা-পিতাকে তারা বয়স্ক আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন। তারপর সেই কেন্দ্রে বছরের বিশেষ দিন অর্থাৎ ফাদারস ডে ও মাদারস ডেতে মাতা-পিতাকে লাল গোলাপ, ক্যান্ডি ও মিষ্টি মুখ করান, দায়িত্ব শেষ। এভাবেই ইউরোপিয়ানরা ও আমেরিকানরা মাতা-পিতার প্রতি দায়িত্ব পালন শেষ করেন।
আমাদের দেশেও মধ্যবিত্ত পরিবার ও উচ্চবিত্ত পরিবারে আনুষ্ঠানিকভাবে ফাদারস ডে ও মাদারস ডে পালন করার সঙ্গে সঙ্গে মাতা-পিতাকে বয়স্ক আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়ে থাকেন। এই অসহায় মাতা-পিতাদের আর্তনাদ মাঝে মাঝে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় উঠে আসে। আমাদের দেশে এক সময় যৌথ পরিবারের ব্যবস্থা ছিল। আজ যা ইতিহাস। যেই মাতা-পিতা সন্তানকে লালন পালন করতে গিয়ে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করেছেন সেই মাতা-পিতারা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা হয়ে গেলে সন্তানদের কাছে বোঝা হয়ে যান। গ্রাম থেকে যখন বৃদ্ধ মাতা-পিতা কোনো সন্তানের কাছে বেড়াতে আসেন তখন সন্তানদের চেহারায় হতাশা ফুটে ওঠে। তারা প্রার্থনা করতে থাকেন কখন তাদের মাতা-পিতা দ্রুত আবার গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাবেন। তারা ভুলে যান আজকে তার যে অবস্থান এই কর্তৃত্ব এই অবহেলিত মাতা-পিতারাই। তারা এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছেন বৃদ্ধা হয়ে গেছেন। হয়ে গেছেন সবার কাছে বোঝা। কিন্তু আমরা যদি মনে রাখি একদিন আমরাও বৃদ্ধ হব, বৃদ্ধা হব তাহলে অসহায় মা-বাবাকে নিয়ে বাকি জীবনটা সুখ-দুঃখের সঙ্গে অতিবাহিত করব।কোনো সন্তান যদি তার পিতা-মাতাকে বয়স্ক আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন, তাহলে তার মনে রাখা উচিত একদিন তাকেও তার সন্তানরা বয়স্ক আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিবে। কারণ আপনি যা করবেন আপনার সন্তানরা ঠিক তাই অনুসরণ করবে। আপনার ধর্ম বিশ্বাস যাই হোক না কেন, সব ধর্মে মাতা-পিতাকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই না বাংলাদেশে কারও মাতা-পিতা বয়স্ক আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যান। ইউরোপ আমেরিকা যা পালন করছে তা সবকিছুই আমরা পালন করব এটা সবসময় অনুসরণ যোগ্য নয়।
লেখক: কলামিস্ট/সম্পাদনা: আশিক রহমান