‘নৌকা ডুবলে তার কি’?
রবিউল আলম
অজয় দাশগুপ্ত, আমার খুব প্রিয় একজন লেখক। তিনি সিডনিতে থাকেন। লিখেন সেখান থেকেই। আমাদের অর্থনীতিতে তিনি নিয়মিত লিখেন। খুব সম্প্রতি তার একটি লেখা আমি পড়েছি। লেখাটির শেষ প্যারায়Ñ ‘নৌকা ডুবলে তার কি’? তার কথাটি আমার মনে ভাবনার খোরাক জুগিয়েছে। অজয় দার মতো হয়তো আমি লিখতে পারি না। তবে মনের ভাবনাগুলো শেয়ার করার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকি। সে কারণেই আমি লিখি। আনন্দের জন্য লিখি।
ঢাকা উত্তরের মেয়র মাননীয় আনিসুল হক অত্যন্ত জনপ্রিয়, তার আন্তরিকতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু ইদানিং একটা প্রশ্ন অনেকেই করেন, মেয়র সাহেব কি চাটুরকারকর্তৃক আবদ্ধ? চাটুকাররা তাকে সর্বসাধারণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে? যেমন সরকার এবং আওয়ামী লীগকে কিছু চাটুকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দুরে রাখার চেষ্টা করছে। দলের হাইকমান্ড চেষ্টা করছে দলকে চাটুকারমুক্ত করতে, কিন্তু পারছে না। পারছে কী? পারছে না। কারণ চাটুকাররা এতই শক্তিশালী যে তা থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন। মেয়র আনিসুল হক অত্যন্ত সাদা মনের মানুষ, আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেকবার তার সঙ্গে দেখা করেছি। অত্যন্ত চমৎকারভাবে আমাদের সাক্ষাৎ দিয়েছেন এবং খোলামেলা আলোচনা করেছেন। গাবতলী গরু হাটের ইজারাদারের অনিয়ম, অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়ে জনমনে কিছু প্রশ্ন উঠেছে তা তাকে অবগত করেছিলাম। মেয়র সাহেব সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। ইজারাদার নৌকার মাঝি নয়, সরকার উৎখাতের অর্থ যোগদানদাতা। ১৫ মাসের আন্দোলনের মধ্যে ১০ দিন ধর্মঘট, মানববন্ধন, সাংবাদিক সম্মেলন, একাধিক জাতীয় পত্রিকা ও টেলিভিশনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। মাত্র দুজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও একজন ইজারাদারের জন্য মাংসের দাম অস্বাভাবিক। দাবি ছিল সরকার নির্ধারিত আইনের সফল বাস্তবায়ন। নগর পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে যথাতথা পশু জবাই বন্ধ করতে মেয়র হানিফ প্রতি মাসে মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে একটি করে সভা করতেন। গরুর গোবর ও পচা রক্ত থেকে এডিস মশার জন্ম। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জনগণের কাছাকাছি থাকা যায় এবং মশাও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। চাটুকারদের চাটুকারিতে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি হয়ে গেল প্রতিপক্ষ।
মাংস ব্যবসায়ীদের বিশাল এই জনগোষ্ঠী জাতির জনক হত্যার বিচারের প্রতিবন্ধকতা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে ১৯৯৪ সালে চাপাতি হাতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছিল, বিশ্বের অনেক চ্যানেল সেই সচিত্র প্রতিবেদন দেখিয়েছিল। কি জবাব দিব তাদের, কি করে বলব আমার সরকার ক্ষমতায়? মাংস ব্যবসায়ীদের কোনো সভায় অংশগ্রহণ নেই, এ লজ্জা ঢাকার স্থানও নেই। কিছুটা মুখ রক্ষা করেছেন মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও মেয়র সাঈদ খোকন বিকল্প একটি গরুর হাট প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে। তাই কিছুদিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। আপনাদের মতো আমারও প্রশ্ন, ভোটের রাজনীতি কি কিছু সুবিধাবাধী মানুষকে দিয়ে হবে, নাকি এই বিশাল জনগোষ্ঠীর সমর্থনের প্রয়োজন হবে। আমাদের প্রাণপ্রিয় মেয়র আনিসুল হককে চাটুকারদের কাছ থেকে রক্ষা করতে হবে, জনকল্যাণ, গণতন্ত্র ও সুস্থ রাজনীতির প্রয়োজনে। তাকে উৎসাহিত করতে হবে। ভালো কাজের প্রশংসা করতে হবে। সমস্যা নিরসনে তার আন্তরিকতার অভাব নেই। তার আন্তরিকতার বহু নজির ইতোমধ্যেই নগরবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।
তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড অপসারণ, গাবতলী যানজটমুক্ত করা ছিল ইতিহাস। গাবতলী গরু হাট ও চিকুনগুনিয়া নিয়ে কি হয়েছে জানি না। লক্ষ্য করলে সবাই অনুধাবন করতে পারবেন, মেয়র আনিসুল হক একটি ভুল কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই তা স্বীকার করে নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। নৌকা ডুবাতে নয়, আগামী নির্বাচনে আনিসুল হককে যেন ভোটের প্রতীক বানানো যায়, তার জন্য তাকে চাটুকার মুক্ত করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, সেই ক্ষমতা ও দক্ষতা আনিসুল হকের আছে। তিনি নেত্রীর বিশ্বাস অর্জন ও দলের কর্মীদের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে চান, কিন্তু কাকে বিশ্বাস করবেন এবং কার মাধ্যমে? প্রতিটি ঈদে কর্মীদের জন্য কিছু একটা করেন কাউন্সিলদের মাধ্যমে, কর্মীরা কি পায় জানি না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান চলছে, হাজার হাজার পরিচ্ছন্নকর্মী আছে, কিন্তু সমন্বয়ের অভাব। রাগে-দুঃখে বলেছেন, ঘরে ঘরে মশারি টানানো কি সম্ভব। মেয়র বুঝতে পারেননি, এটা সম্ভব, শেখ হাসিনার বিশাল কর্মীবাহিনীকে সমন্বয় করে নিলেই সম্ভব। আওয়ামী লীগ পারে না এমন কি আছে? আনিসুল হক একবার ডাক দিয়ে দেখুনÑ ঘরে ঘরে, গলিতে গলিতে শেখ হাসিনার কর্মীবাহিনী আপনার পাশে থেকে জনগণকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে। জাতির জনকের ডাকে স্বাধীনতা, শেখ হাসিনার ডাকে গণতন্ত্র রক্ষা, মেয়র হানিফের ডাকে জনতার মঞ্চ। মাননীয় মেয়রÑ আপনি ডাকলে চিকুনগুনিয়া দূর করতে খুবই কম সময় লাগবে। আশা করছি, আপনি সেই ডাকটি দিবেন, আমরা আপনার ডাকের অপেক্ষায় আছি।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান