বদলি কি শাস্তি?
মাসুদ কামাল
বরগুনার ইউএনও তারিক সালমনের স্বল্পকালীন হাজতবাস নিয়ে দেশজুড়ে এরই মধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাদী আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল্লাহ সাজুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বরিশাল ও বরগুনার ডিসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসবই সরকার করেছে। সরকারের এই কাজগুলো প্রশংসা করার মতো। আওয়ামী লীগের নেতা হয়েও অ্যাডভোকেট সাজু যা করেছেন, তাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে, তাই দল তাকে শাস্তি দিয়েছে। দুই ডিসি পারেননি ইউএনও তারিক সালমনকে রক্ষা করতে, তাই তাদেরও শাস্তি পেতে হলো, জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তাদেরকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হলো। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি বিকৃতির অভিযোগটি যে আসলেই ভুয়া ছিল, তা এরই মধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এটিকে মামলা হিসেবে কিভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে তা নিয়ে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। মানছি- ওবায়দুল্লাহ সাজু একজন রাজনৈতিক ধান্দাবাজ, সে তার ধান্দার স্বার্থে কিংবা গডফাদারকে খুশি করতে আজগুবি এই মামলা সাজিয়েছিল। এটাও মানি, সরকারি চাকরি করতে গেলে অনেক সময় রাজনৈতিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়, যেটা দুই ডিসির উপর ছিল। কিন্তু ওই বিচারকের সমস্যাটা কি ছিল? বিচারবিভাগ তো স্বাধীন, এর উপর প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা নয়। তাছাড়া তিনি আইনের লোক, তারই তো সবচেয়ে আগে বোঝার কথা ছিল যে, এই মামলার পুরোটাই ভিত্তিহীন এবং মতলবি। তাহলে কি তিনি নিজে থেকেই কাউকে খুশি করতে ব্যগ্র ছিলেন?
এরই মধ্যে এই ভদ্রলোকের অতীত কর্মকা- সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য বের হয়ে এসেছে, সেসব নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কারণ মল যত কম ঘাটা যায়, ততই ভালো। তার অতীত নয়, আমার উদ্বেগ বরং ভবিষ্যৎ নিয়ে। তার নয়, আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। এর মধ্যে জানা গেল এই ভদ্রলোককে জামালপুরে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে। যদি শেষ পর্যন্ত তা করা হয়, তাহলে সেটা কি শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থার অংশ হবে? কিভাবে হবে? জামালপুরে গিয়ে তো তিনি আবার বিচারকের দায়িত্বই পালন করবেন। উনার সততা আর বিবেচনাবোধের যে নমুনা জাতি এরই মধ্যে দেখেছে, এরপর তার উপর আবার ভরসা থাকে কি করে? নাকি জামালপুরের মানুষের মাঝে মাঝে সুবিচার না পেলেও চলবে?
তাকে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে আইন মন্ত্রণালয় থেকে। আর বদলি কিংবা শাস্তি প্রদানের দায়িত্বটা প্রধান বিচারপতির। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে ইদানিং অনেক কথা হয়। উচ্চ আদালতের বিচারকদের চাকরিচ্যুতির এখতিয়ারটা জাতীয় সংসদের কাছে থাকবে কি-না, তা নিয়ে তুলকালাম কা-ও হয়ে গেল। তো ঠিক আছে, আমরা না হয় এবার দেখি, এই বিচারকের বিষয়ে শেষ পর্যন্ত কি ব্যবস্থা নেওয়া হয় প্রধান বিচারপতির দফতর থেকে।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
সম্পাদনা: আশিক রহমান