সকল হিন্দুর বেদে সম অধিকার
া পূজন বিশ্বাস
বেদ আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ, আমাদের কারও কারও মধ্যে একটি ধারণা আছে যে বেদে ব্রাহ্মণ ছাড়া আর কারও অধিকার নাই। এটা পুরোটাই ভুল, কারণ যর্জুবেদে বলা হয়েছেÑ
‘ ওঁ যথেমাং বাচং কল্যানীমাবদানি জনেভ্যঃ।বহ্ম রাজন্যাভ্যাং শূদ্রায় চার্য্যায় চ স্বায় চারণায়।। প্রিয়ো দেবানাং দক্ষিণায়ৈ দাতুরিহ, ভূয়াসময়ং মে কামঃ সমৃধ্যতামুপ মাদো নমতু।।’ Ñ যজুর্বেদ ২৬/২
অনুবাদ : হে মনুষ্যগণ আমি যেরূপে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র, স্ত্রীলোক এবং অন্যান্য সমস্ত জনগনকে এই কল্যাণদায়িনী পবিত্র বেদবানী বলিতেছি, তোমরাও সেই রূপ কর। যেমন বেদবানীর উপদেশ করিয়া আমি বিদ্বানদের প্রিয় হয়েছি, তোমরাও সেরূপ হও। আমার ইচ্ছা বেদ বিদ্যা প্রচার হোক, এর দ্বারা সকলে মোক্ষ এবং সুখ লাভ করুক।
এখানে দেখা যাচ্ছে বেদের সত্যদ্রষ্টা ঋষি বলছেন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র স্ত্রীলোক এবং অন্যান্য সকল জনগণের জন্যই এই পবিত্র বেদবানী। সুতরাং বেদ মন্ত্র উচ্চারণে সকলেরই সমান অধিকার। সব থেকে মজার বিষয় হলো বেদের মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিদের মধ্যে মহিলা ঋষিও রয়েছেন যেমনÑ ১ম মন্ডল ১৭৯ সূক্তেরদেবতা রতি, ঋষি অগস্ত্যের পতœী লোপামুদ্রা। ২. ৫ মন্ডল ২৮ সুক্তেরদেবতা অগ্নী, ঋষি অত্রিকন্যা বিশ্ববারা। ৩. ৮ মন্ডল ৯৬ সুক্তেরদেবতা ইন্দ্র, ঋষি অত্রি কন্যা অপালা। ৪. ১০ মন্ডল ৩৯ ও ৪০ সুক্তেরদেবতা অশ্বিদয়, ঋষি কক্ষিবৎ কন্য ঘোষা। ৫. ১০ মন্ডল ৮৫ সুক্ত যা বিবাহ সূক্ত বলে খ্যাততার ঋষি সাবিত্রি সূর্যা। ৬. ১০ মন্ডল ১২৫ সুক্তেরদেবতা আত্মা, ঋষি অশ্ভৃণ কন্যা বাকৃ। ৭. ১০ মন্ডল ১৮৫ সুক্তেরদেবতা সপতœীবাধন, ঋষি ইন্দ্রানী।
আমরা উপরে পেলাম সাত জনমহিলা ঋষি যথাক্রমে: লোপামুদ্রা, বিশ্ববারা, অপালা, ঘোষা, সূর্যা, বাকৃ এবং ইন্দ্রানী। আমাদের একটা প্রচলিত কথা আছে যে বেদে মেয়েদেরও অধিকার নেই। এটা আসলে ঠিক নয়, কারণ দেখা যাচ্ছে – বেদের মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিদের মধ্যে নারীরাও রয়েছেন। যাদের অধিকারই নাই তারা ঋষি এবং মন্ত্রদ্রষ্টা হন কেমন করে? আসলে এগুলো অসাধু মহলের কারসাজি। তাহলে উপরোক্ত প্রমাণ অনুসারে আমরা অবশ্যই বলতে পারি বেদে সকলেরই সমান অধিকার।